কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আশুরা

- আপডেট সময় : ০৬:০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
মোঃ মাছউদুর রহমান-
আশুরা কি?
বছরের অনেক দিনকে আলস্নাহ রব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল করার জন্য। এমনি একটি দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। আল্লাহর নবী মুসা আলাইহিস্ সালাম ফিরআউন ও তার বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তাই এই দিনটি হচ্ছে শিরকের উপর তাওহীদের বিজয়ের দিন, তাগুতের উপর রিসালাতের পতাকাবাহীদের বিজয়ের সময়। এ দিনটি মুহাররমের দশ তারিখ হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয় আশুরা।
কুরআনে কারীমে আশুরা :
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস। আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও জমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের উপর কোন যুলুম করো না। [সূরা তাওবা : ৯ : ৩৬]
এ আয়াতে মুহাররম মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা উল্লেথ করা হয়েছে। এ মাসটি আসমান জমীন সৃষ্টির দিন থেকে পবিত্র, নিষিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ।
সুন্নাহয়ে আশুরা :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদীরা আশুরার দিন সিয়াম পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনি ইসরাঈলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে রক্ষা করেছেন। তাই মুসা আলাইহিস সালাম সিয়াম পালন করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সিয়াম রেখেছেন এবং সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। [বুখারী : ১৮৬৫]
মুহাররম মাসের গুরম্নত্ব ও ফজিলত :
ক. মুহাররম নিষিদ্ধ ও পবিত্র মাস।
খ. এ মাসকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাহরুল্লাহু বা আল্লাহ তা’আলার মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা বহন করে।
গ. মুহাররম মাসে অধিক পরিমাণে নফল সিয়াম পালন করা।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“রমাদানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররম (মাসের সিয়াম)।”
শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে সিয়াম পালন করেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মুহাররম মাসে অধিক পরিমাণে সিয়াম পালন করার বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়নি। হতে পারে মুহাররম মাসের ফজিলত সম্পর্কে তাকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি। (ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম)
আশুরার গুরম্নত্ব ও ফজিলত :
ক. এই দিন সিয়াম পালনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতীব আগ্রহী ছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিয়াম রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমাদান মাসের সিয়ামের প্রতি। [বুখারী : ১৮৬৭]
খ. এই দিনের সিয়াম বিগত দিনের কাফফারা স্বরুপ :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আশুরার দিনে সিয়াম পালনের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ড়্গমা করে দেবেন। [মুসলিম : ১৯৭৬]
এটি আমাদের প্রতি মহান আলস্নাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের সিয়ামের মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম মহিয়ান ও দয়াময়।
গ. জাহেলী সমাজও এদিনে সিয়াম পালন করত :
হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার সিয়াম পালন করত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সিয়াম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় হিজরত করলেন তখন তিনি এ সিয়াম পালন করলেন ও অন্যদের সিয়াম পালন করতে নির্দেশ দিলেন। যখন রমাদান মাসের সিয়াম ফরজ হল তখন তিনি আশুরার সিয়াম সম্পর্কে বললেন-‘যার ইচ্ছা আশুরার সিয়াম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা ছেড়ে দিবে’।” [মসলিম : ১৪৬]
ঘ. এই দিনে মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদাায় সিয়াম পালন করেছে :
“মুসা আলাইহিসসালাম এই দিবসটি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করনার্থে সিয়াম পালন করেছেন, তাই আমরাও এদিনে সিয়াম পালন করছি। [মুসলিম : ১১৩০]
আশুরার সিয়ামের বিধান :
আশুরার সিয়াম পালন সুন্নাত। এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে এ সিয়াম পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি যারা এদিনে সিয়াম পালন করেনি তাদেরকে দিবসের বাকী অংশে সিয়াম পালনে বাধ্য করেছেন। অপর বর্ণনায় এসেছে, শিশুদেরকেও পানাহার থেকে বিরত রাখতে বলেছেন।
আশুরার সিয়ামের পর্যায় হচ্ছে চারটি :
প্রথমতঃ আশুরার আগে পরে দুইদিন ও আশুরাসহ তিনদিন সিয়াম পালন করা। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এটিকে উত্তম বলেছেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ সনদে এর সমর্থন পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে বর্ণিত মারফু হাদীসটি যাতে বলা হয়েছে
عَنْ إِبْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صُمُوْا يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَخَالِفُوْا فِيْهِ الْيَهُوِدَ، صُمُوْا قَبْلَهُ يَوْمًا اَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا. [مسند أحمد بقم الحديث: ۲۱۵٤]
এই হাদীসটি সনদের দিক থেকে দূর্বল।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ সনদে আরেকটি হাদীস পাওয়া যায়
قَالَ صُوْمُوا التَّاسِعْ وَالْعَاشِرْ وَخَالَفُوْا الْيَهُودِ هذا إسناده صحيح موقوف، [مسند أحمد ٤/۵۲ جديد]
“তোমরা ৯ ও ১০ তারিখ সিয়াম পালন করে ইয়াহুদীদের বিপরীত আমল কর”।
দ্বিতীয়তঃ নবম ও দশম তারিখ সিয়াম পালন করা। এর স্বপক্ষ্যে রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম হতে সহীহ বর্ণনায় হাদীস পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“যদি আমি সামনের বছর বেচে থাকি তাহলে অবশ্যই মুহাররমের নয় তারিখে সিয়াম পালন করবো। [মুসলিম : ১৫১]
তৃতীয়তঃ দশম ও একাদ্বশ দিবস সিয়াম পালন করা।
চতুর্থতঃ শুধু দশম দিবসে সিয়াম পালন করা। একদল ওলামায়ে কিরাম শুধু আশুরা দিবসের সিয়াম পালনকে মাকরূহ বলেছেন। এ মতটিকে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. সমর্থন করেছেন। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সকল বর্ণনায় সাব্যস্ত হয়েছে তিনি কেবল দশম তারিখে সিয়াম পালন করেছেন। সুতরাং কেবল দশম তারিখে সিয়াম পালন করা মাকরূহ এর শর’য়ী কোন ভিত্তি নেই।
আশুরা সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল আক্বীদা-বিশ্বাস :
ক. হুসাইন ইবনে আলী রদিয়াল্লাহু আনহু এর মৃত্যুতে এ দিনটিকে পবিত্র মনে করা :
শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এই দিবসটিকে শুধুমাত্র হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র মৃত্যুর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আর শিয়াদের ব্যাপক প্রচারণার কারণে এবং ইসলাম বিষয়ে না জানার কারণে অনেক সাধারণ মুসলিমও এমন ধারণা পোষণ করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ, আশুরা দিবস উপলক্ষে পত্রিকাগুলোতে যে বিশেষ ফিচার লেখা হয় সেখানে হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু তথা কারবালার ঘটনাটিকেই বিশেষ গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করা হয়। এসব আলোচনা থেকে মনে হয় যেন কারবালার ঘটনার পর আশুরার গুরম্নত্ব ও তাৎপর্য সার্বস্ত হয়েছে। অথচ আশুরার তাৎপর্যের সাথে কারবালার ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই! কারণ, আশুরা সেই দিনটিকেই বলা হয় যেদিন ‘তাওহীদ শির্কের উপর বিজয়ী হয়েছিল’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনটির তাৎপর্য বর্ণনা করে গেছেন এবং এ দিবসে কি করণীয় তাও সাহাবীদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। অথচ হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর! কাজেই হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর ঘটনা তথা কারবালার ঘটনাকে আশুরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মনে করা সহীহ ধারণার পরিপন্থী।
খ. এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, এ দিবসে সবকিছু সৃষ্টি ও বিবর্তন হয়েছে :
এই দিবস সম্পর্কে অনেকেই বর্ণনা করে থাকেন যে, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনটিতেই ধ্বংস হবে। আদম আলাইহিস সালাম এই দিবসে সৃষ্টি করা হয়েছে, নূহ আলাইহিস্ সালামের প্লাবন এই দিবসে হয়েছিল এবং এই দিনেই প্লাবন শেষে নৌকা জুদি পাহাড়ে ঠেকেছিল। এই দিনে মাছের পেট থেকে ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, মুসা আলাইহিস্ সালাম এই দিনে তাওরাত লাভের জন্যে তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন, নমরুদের আগুন থেকে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামকেও এই দিনে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে প্রভৃতি ঘটনা আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। অথচ এসবের কোন সঠিক ও বিশুদ্ধ প্রমাণ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ অত্যন্ত দূর্বল ও বানোয়াট।
গ. এ দিনে মিরাজ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম হয়েছে মনে করা :
কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন এই দিবসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিরাজ হয়েছে এবং তিনি এই দিনটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন। অথচ কুরআন এবং হাদীসে নববীতে এর কোন দলীল পাওয়া যায় না।
আশুরা দিবসে বর্জণীয় :
ক. শোক দিবস পালন করা :
হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়ালস্নাহু আনহুর মৃত্যু এই দিনে হয়েছিল বিধায় এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করার রীতি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-“উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদেরকে তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে হয়।” [বুখারী : ৫৩৪১]
হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়ালস্নাহু আনহুর মৃত্যু হয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, কাজেই এতবছর পরও শোক পালন করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অমান্য করার নামান্তর।
খ. মাতম করা, আহাজারী করা, বুক চাপরানো, পোষাক ছিড়ে ফেলা প্রভৃতি :
আশুরার দিবসে আমাদের দেশে বিশেষ কিছু স্থানে বেশ আয়োজন করে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। এই তাজিয়া মিছিলের নেপথ্যে থাকে শিয়া সম্প্রদায়। তারা মিছিলে বুক চাপরায়, বিলাপ করে, শরীরে চাবুক মারে, পোষাক ছিড়ে ফেলে, শরীর রক্তাক্ত করে হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়ালস্নাহু আনহুর শোক প্রকাশ করে থাকে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “আব্দুলস্নাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গালের উপর চপেটাগাত করল, বক্ষদেশ বিদীর্ণ করল এবং জাহিলিয়াতের ডাকের অনুসরণ করে আহবান করল, সে আমাদের (মুসলমানদের) অন্তর্ভুক্ত নয়’।” [বুখারী : ১২৩৬, মুসলিম : ২৯৬]
“উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইআত গ্রহণকালে আমাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যেন আমরা মৃত ব্যক্তির শোক প্রকাশার্থে উচ্চ শব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে কান্নাকাটি না করি। [বুখারী : ১৩০৬, মুসলিম]
“হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি বিষয় এমন যা মানুষের মধ্যে কুফরী বলে গণ্য হয়। বংশধারাকে কলংকিত করা ও মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশার্থে উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা।” [মুসলিম : ১২১]
গ. এ দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা এবং তার ফজিলত বর্ণনা করা :
আশুরার দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করার বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়। হাদীসটি হচ্ছে-“যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবারবর্গের লোকদের জন্য সচ্ছলতার জন্য (ভাল খাবারের) ব্যবস্থা করবে আলস্নাহ সারা বছর তাকে সচ্ছল রাখবেন।”
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেছেন- হাদীসটি সহীহ নয়।
ঘ. এ দিবসকে কবর যিয়ারতের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া :
ঙ. কারবালার ময়দানে উপস্থিত হয়ে মাতম ও তাজিয়া মিছিল করা :
আশুরার শিক্ষা :
ক. হক ও বাতিলের চিরন্তন সংঘাতে হকের বিজয় নিশ্চিত এবং আল্লাহর সাহায্য হক পন্থীদের জন্য অবধারিত। এ বাস্তবতা আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে এবং বিশ্বাসে পরিণত করতে হবে। তাই আল্লাহর তা’আলা বনী ইসরাঈলকে আশুরার এ দিবসে বিজয় দান করেছেন।
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ.
“আর যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত আমি তাদেরকে যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেখানে আমি বরকত দিয়েছি এবং বনী ইসরাঈলের উপর তোমার রবের উত্তম বাণী পরিপূর্ণ হল। কারণ তারা ধৈর্য ধারণ করেছে। আর ধ্বংস করে দিলাম যা কিছু তৈরী করেছিল ফির’আউন ও তার কওম এবং তারা যা নির্মাণ করেছিল। [সূরা আরাফ : ৭ : ১৩৭]
খ. আশুরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দিবস যাতে কেবল সিয়াম পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ দিবসে অন্য কোন ধরণের আনুষ্ঠনিকতা বা ইবাদত পালনের বৈধতা ও মর্যাদা নেই। তাই এ দিবসকে বিশেষভাবে ঘটা করে পালন করার কোন প্রকারের দলীল দ্বারা সামর্থিত হয়নি।
গ. শুকরিয়া আদায় কেবল মৌখিক বিষয় নয়। শুকরিয়া আদয়ের একটি উপায় হচ্ছে, সিয়াম পালন। মুসা আলাইহিস্সালাম সিয়াম পালনের মাধ্যমে আলস্নাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করেছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ কাজটিকে হাদীসের মাধ্যমে সমর্থন করেছেন।
ঘ. আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় লাভ করার পর তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে। অবনত চিত্তে, বিগলিত আন্তরে, সিজদানমিত মস্তকে তার অনুগ্রহ ও দয়ার কথা স্বীকার করে নিতে হবে। বিজয়ের আনন্দ-উল্লাস, হৈ চৈ ও বাড়াবড়ি যেন আমাদেরকে আলস্নাহর শুকরিয়া আদায় থেকে বিমুখ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঙ. কারবালার ইতিহাস স্বরণে আশুরা পালনের নামে যে সকল মাতম, মর্সিয়া, তাজিয়া মিছিল, শরীর রক্তাক্ত করাসহ যা কিছু করা হয় এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম এ সকল কার্যকলাপের অনুমোদন দেয় না। এগুলো সন্দেহাতীতভাবে বিদ’আত। এগুলো পরিহার করে চলা ও অন্যদের পরিহার করতে উৎসাহিত করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী সকল ঈমানদারের কর্তব্য।
মহান আল্লাহর নিকট দো’আ করি যেন তিনি আমাদেরকে আশুরা সম্পর্কিত যাবতীয় বিদ’আত, কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা, বানোয়াট ভিত্তিহীন হাদীস বলা ইত্যাদি বর্জন করে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আশুরাকে জানা ও এ দিবসের করণীয় কাজসমূহ করার ও বর্জণীয় বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার তাওফীক দান করেন। মহান আল্লাহ আমাদের হক কথা বুঝার ও তা মেনে চলার তাফীক দান করুন। আমীন।