০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে মানববন্ধন ভোলা জেলা ওলামা তলাবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করায় বিমানবন্দরে এফবিসিসিএফএএ’র সংবাদ সম্মেলন ক্যারিয়ার বাংলাদেশের গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত দলিপাড়া ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবু জাফর আলম উত্তরা ১১ নং সেক্টর ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া সেই গুলিবিদ্ধ ইমরান কে দেখতে গেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর একাত্তরের ন্যায় ২৪ যোদ্ধারাও পাবে সকল সুবিধা-মুস্তাফিজ সেগুন গুম-খুনের শিকার ও চব্বিশের শহীদ পরিবারকে ঈদ উপহার দিলেন বিএনপি নেতা আমিনুল হক জাতিসঙ্ঘ শূন্য বর্জ্য দিবসে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানালেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আরাফার সিয়ামে একবছর আগের ও পরের গুনাহ মাপের আশা পোষণ রাসূল (সাঃ) এর

ইসলাম ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১২:০৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস অব টাইম অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ মাছউদুর রহমান

জ্বিলহজ্ব মাসের নয় তারিখকে (ইয়াউমুল আরাফা)আরাফার দিবস বলা হয়। কারণ ঐ দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে থাকেন।এক আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস।আল্লাহ তাআলা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন-ওরা কী চায়? [মুসলিম : হাদিস নং ১৩৪৮] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন।তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়।[মুসনাদে আহমদ : ২/২২৪]

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে সূর্যাস্তের পূর্বে বেলালকে রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিলেন মানুষদেরকে চুপ করাতে। বেলাল বললেন, আপনারা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নীরবতা অবলম্বন করুন। জনতা নীরব হল। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে লোকসকল! একটু পূর্বে জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আহলে আরাফা ও আহলে মুযদালেফার জন্য আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়েছেন, ও তাদের অন্যায়ের জিম্মাদারি নিয়েছেন। ওমর দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এটা কি শুধুই আমাদের জন্য? তিনি বললেন, এটা তোমাদের জন্য ও তোমাদের পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাদের জন্য। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর অনুকম্পা অঢেল ও উত্তম।[আল মাতজার আররাবেহ : ২৩৬ ; ইবনে মুবারক হাদিসটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন]

আরাফা দিবস মুসলমানদের ওপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। তারিক ইবনে শিহাব থেকে বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদিরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল: আপনারা একটি আয়াত পড়েন, যদি তা আমাদের ওপর নাযিল হতো তাহলে এ দিবসে আমরা উৎসব পালন করতাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি অবশ্যই জানি কী উদ্দেশ্যে ও কোথায় তা নাযিল হয়েছে, এবং রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় ছিলেন যখন তা নাযিল হল। তা ছিল আরাফা দিবস। আর আমরা-আল্লাহর কসম আরাফার ময়দানে।

সুফিয়ান বলেন, দিনটি জুমাবার ছিল কি-না, আমার সন্দেহ আছে।(আয়াতটি ছিল সূরা মায়িদার ৩ নং আয়াত)

  …… الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” [বোখারি : হাদিস নং ৪৬০৬]

যারা হজ্বরত নন এমন ব্যক্তিদের জন্য এ দিনে সিয়াম পালন করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। এদিনে সিয়াম পালন মুস্তাহাব বলে ফিকহাবিদগণ একমত পোষণ করেছেন।হাজিদের জন্য আরাফার ময়দানে রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে রোজাবিহীন অবস্থায় ছিলেন। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন।[মুসলিম : হাদিস নং ১১২৩-১১২৩] ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।[মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪]

এ দিনের ফজীলত সম্পর্কে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-“আরাফার দিবসের সিয়াম একবছর আগের ও একবছর পরের গুনাহসমূহকে মোচন করে দেবে বলে আমি আল্লাহর নিকট আশা পোষণ করছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৩] এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আরাফা দিবসে সিয়ামের যে ফজীলত হাদীসে এসেছে তা সৌদি আরবের আরাফা দিবস হিসেবেই প্রযোজ্য হবে। সেদিন অন্য কোন দেশে কত তারিখ সেটি দেখার বিষয় নয়। কাজেই যেদিন সৌদিতে জ্বিলহজ্বের নয় তারিখ সেদিন আরফার দিবস এবং সেদিনই সিয়াম পালন করতে হবে।

এ সিয়াম না রাখলে গুনাহ হবে না। তবে এ সিয়ামের ফজিলত অন্যান্য নফল রোজার চেয়ে অধিক। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের  সিয়ামের ছওয়াব এক হাজার দিন সিয়াম রাখার সমান’।(তারগিব)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আরাফা দিবসের সিয়াম পালনের মাধ্যমে হাদীসে বর্ণিত ফজিলত হাসিলের তাওফিক দান করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আরাফার সিয়ামে একবছর আগের ও পরের গুনাহ মাপের আশা পোষণ রাসূল (সাঃ) এর

আপডেট সময় : ১২:০৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

মোঃ মাছউদুর রহমান

জ্বিলহজ্ব মাসের নয় তারিখকে (ইয়াউমুল আরাফা)আরাফার দিবস বলা হয়। কারণ ঐ দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে থাকেন।এক আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস।আল্লাহ তাআলা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন-ওরা কী চায়? [মুসলিম : হাদিস নং ১৩৪৮] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন।তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়।[মুসনাদে আহমদ : ২/২২৪]

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে সূর্যাস্তের পূর্বে বেলালকে রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিলেন মানুষদেরকে চুপ করাতে। বেলাল বললেন, আপনারা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নীরবতা অবলম্বন করুন। জনতা নীরব হল। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে লোকসকল! একটু পূর্বে জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আহলে আরাফা ও আহলে মুযদালেফার জন্য আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়েছেন, ও তাদের অন্যায়ের জিম্মাদারি নিয়েছেন। ওমর দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এটা কি শুধুই আমাদের জন্য? তিনি বললেন, এটা তোমাদের জন্য ও তোমাদের পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাদের জন্য। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর অনুকম্পা অঢেল ও উত্তম।[আল মাতজার আররাবেহ : ২৩৬ ; ইবনে মুবারক হাদিসটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন]

আরাফা দিবস মুসলমানদের ওপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। তারিক ইবনে শিহাব থেকে বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদিরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল: আপনারা একটি আয়াত পড়েন, যদি তা আমাদের ওপর নাযিল হতো তাহলে এ দিবসে আমরা উৎসব পালন করতাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি অবশ্যই জানি কী উদ্দেশ্যে ও কোথায় তা নাযিল হয়েছে, এবং রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় ছিলেন যখন তা নাযিল হল। তা ছিল আরাফা দিবস। আর আমরা-আল্লাহর কসম আরাফার ময়দানে।

সুফিয়ান বলেন, দিনটি জুমাবার ছিল কি-না, আমার সন্দেহ আছে।(আয়াতটি ছিল সূরা মায়িদার ৩ নং আয়াত)

  …… الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” [বোখারি : হাদিস নং ৪৬০৬]

যারা হজ্বরত নন এমন ব্যক্তিদের জন্য এ দিনে সিয়াম পালন করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। এদিনে সিয়াম পালন মুস্তাহাব বলে ফিকহাবিদগণ একমত পোষণ করেছেন।হাজিদের জন্য আরাফার ময়দানে রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে রোজাবিহীন অবস্থায় ছিলেন। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন।[মুসলিম : হাদিস নং ১১২৩-১১২৩] ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।[মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪]

এ দিনের ফজীলত সম্পর্কে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-“আরাফার দিবসের সিয়াম একবছর আগের ও একবছর পরের গুনাহসমূহকে মোচন করে দেবে বলে আমি আল্লাহর নিকট আশা পোষণ করছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৩] এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আরাফা দিবসে সিয়ামের যে ফজীলত হাদীসে এসেছে তা সৌদি আরবের আরাফা দিবস হিসেবেই প্রযোজ্য হবে। সেদিন অন্য কোন দেশে কত তারিখ সেটি দেখার বিষয় নয়। কাজেই যেদিন সৌদিতে জ্বিলহজ্বের নয় তারিখ সেদিন আরফার দিবস এবং সেদিনই সিয়াম পালন করতে হবে।

এ সিয়াম না রাখলে গুনাহ হবে না। তবে এ সিয়ামের ফজিলত অন্যান্য নফল রোজার চেয়ে অধিক। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের  সিয়ামের ছওয়াব এক হাজার দিন সিয়াম রাখার সমান’।(তারগিব)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আরাফা দিবসের সিয়াম পালনের মাধ্যমে হাদীসে বর্ণিত ফজিলত হাসিলের তাওফিক দান করুন।