০৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে মানববন্ধন ভোলা জেলা ওলামা তলাবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করায় বিমানবন্দরে এফবিসিসিএফএএ’র সংবাদ সম্মেলন ক্যারিয়ার বাংলাদেশের গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত দলিপাড়া ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবু জাফর আলম উত্তরা ১১ নং সেক্টর ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া সেই গুলিবিদ্ধ ইমরান কে দেখতে গেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর একাত্তরের ন্যায় ২৪ যোদ্ধারাও পাবে সকল সুবিধা-মুস্তাফিজ সেগুন গুম-খুনের শিকার ও চব্বিশের শহীদ পরিবারকে ঈদ উপহার দিলেন বিএনপি নেতা আমিনুল হক জাতিসঙ্ঘ শূন্য বর্জ্য দিবসে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানালেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

হ্জ শেষে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার অনুষ্ঠান, রাজনীতি সমাজনীতিসহ নিজ নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিক্ষার অনুসরণ করেন, তারাই প্রকৃত হাজী।

হজ্ব : স্বীয়কামনা ও ইচ্ছাশক্তিকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিবেদনের বাস্তব অনুশীলন

নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:১১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩ ৬০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস অব টাইম অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুফতী হুসাইন আহমদ জিয়া :
মহান স্রষ্টা অসংখ্য অগণিত মাখলুক সৃষ্টি করে সাজিয়েছেন এ বসুন্ধরা। সব মাখলূকের মাঝে মানুষই সেরা সৃষ্টি। মানুষকেই আল্লাহপাক দিয়েছেন চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি ও মেধা। এই বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ তার লাভ-ক্ষতি, মঙ্গল-অমঙ্গল অনুধাবন করে। সফলতা ও উন্নতির নানা পথ আবিষ্কার করে। তাই দেখা যায়, মানুষ মাত্রই নিজ বুদ্ধির উপর যারপরনাই আস্থাবান। এ জন্যই হয়ত ‘নিজের বুদ্ধিতে ফকীর হওয়াও ভাল’ এরকম বাগধারা সমাজে চালু রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় মানুষকে তার বুদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জরুরী হয়ে পড়ে। আর এতে দোষেরও কিছু নেই। কারণ, বিপ্লব-বিদ্রোহ ছাড়াই যে জীবন পার হয়ে যায়, সেটা আর কিসের জীবন! তাই প্রতি দিনের অনুসৃত রীতি-নীতি, পদ-পদবী, বানোয়াট আভিজাত্য ও ঠুনকো সামাজিকতার সকল বন্ধন ছিন্ন করে মুক্ত -স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন বুদ্ধির যাতাকলে পিষ্ট জীবনকে কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রেমময় আত্মার পরশে সমর্পণ করা। আর এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহপাক আমাদেরকে হজ্বের বিধান দান করেছেন।
সামাজিক রীতিনীতি ও সোসাইটির বন্ধনে যে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। কে বলে সে স্বাধীন? যে স্বীয় অভ্যাস, প্রবৃত্তি ও তৃপ্তিদায়ক বিলাস দ্রব্রের মাঝে ডুবে আছে সারাক্ষণ সে একত্ববাদের পুজারী হয় কিভাবে? নিজের বুদ্ধির উপরই যার একমাত্র আস্থা, যে তার ভঙ্গুর ও সীমিত বুদ্ধির সাহায্যে পার্থিব লাভের দিকটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কোন আমল ও আনুগত্যের প্রেরণা অনুভব করেনা, তাকে অনুগত ও বিশ্বস্ত বলা যায় কিভাবে? হজ্বের প্রতিটি কাজই বুদ্ধি ও বস্তু পুজারীদের ভিত্তি হীন ধ্যান-ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। কোনরূপ প্রশ্ন ব্যতিরেকে প্রতিটি হুকুমকে আল্লাহর হুকুম মনে করে যথাযথভাবে পালন করার যোগ্যতা সৃষ্টি করাই হজ্বের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই বাছাই না করে যে মেধা ও বুদ্ধি এ যাবৎ কোন কিছুই গ্রহণ করতো না, কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে এই পদ থেকে নামিয়ে ফেলতে হয় এবং কেবল আল্লাহর হুকুম মনে করে হজ্বের যাবতীয় কাজগুলি পালন করে যেতে হয়।
ইমাম গাযালী রহ.খুবই চমৎকারভাবে হজ্বের তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন। দ্বীনের এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি অত্যন্ত হৃদয় গ্রাহী ব্যাখ্য কেশ ও ধুলিমলিন বেশে হাজীর হয়ে কাবার মালিকের মহত্ব ও বড়ত্বের সামনে আপন অস্তিত্বের কথা ভুলে যায় এবং চরম দীনতা-হীনতা প্রকাশ করতঃ আনুগত্যের শীর নত করে দেয়। যাতে করে গোলামী ও দাসত্বের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্যের মাঝে কোনরূপ ত্রুটি না থাকে। এজন্যই তাদেরকে এমন কিছ ুকাজের হুকুম দেয়া হয়েছে, মানবমনের সাথে যার কোনরূপ সম্পর্ক নেই, বিবেকবুদ্ধি দিয়েও তা স্পর্শ করা যায়না। যেমন- জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও সাফা-মারওয়ায় সায়ী করার হুকুম পালনের মাঝে রয়েছে নিঃশর্ত গোলামী ও পরিপূর্ণ আনুগত্য। কিন্তু বুদ্ধি-বিবেক এর মর্মার্থ অনুধাবনে সম্পূর্ণ অক্ষম। এ কাজগুলো কেবল নিঃশর্ত আনুগত্যের প্রেরণা থেকেই পালন করা হয়। যেহেতু এগুলো আল্লাহর হুকুম, তাই অবশ্যই পালনীয়-এ বোধ জাগ্রত করে বুদ্ধির সকল আধিপত্য খর্ব করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
বস্তুতঃ নির্দেশ পালনই কংকর নিক্ষেপের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। পরিপূর্ণ গোলামী ও দাসত্বের বহিঃপ্রকাশই কাম্য। এখানে বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির কোন স্থান নেই। এর আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। কারণ এখানেই অভিশপ্ত শয়তান তাঁকে বিভ্রান্তা করার চেষ্টা করেছিল। তখন আল্লাহপাক হুকুম দিলেন ওকে কংকর নিক্ষেপ করে তাড়িয়ে দাও। ওর সকল আশা চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দাও। যদি কেউ এরূপ ধারণা করে যে, তখন শয়তান বাস্তব আকৃতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, এজন্য হযরত ইবরাহীম আ. তাকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। আমার সামনে তো শয়তান নেই, আমি কেন কংকর নিক্ষেপ করবো? তাহলে তার বুঝা উচিত যে, এ ধারণাও শয়তানেরই সৃষ্ট। শয়তানই এই ধারণা তোমার মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছে। যাতে শয়তানকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার যে স্পৃহা তোমার মাঝে লুকায়িত ছিল, তা একবারে নিস্তেজ হয়ে যায়। তোমার বুঝা উচিত যে, দৃশ্যত তুমি জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপ কর, কিন্তু বাস্তবে তা শয়তানের মুখের উপর পতিত হয় এবং তার কোমর ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। কেননা শয়তানের সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছনা ও অপমান এরূপ হুকুম পালনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে, যা শুধুমাত্র আল্লাহর মহত্ব ও নিঃশর্ত আনুগত্যের চেতনা নিয়ে সম্পাদিত হয়। যেখানে বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির কোনরূপ সংশ্রব নেই।
লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, হজ্বের সমস্ত রুকন ও যাবতীয় কর্মকা- নিঃশর্ত আনুগত্য ছাড়া কিছু নয়। বিনা বাক্য ব্যয়ে প্রতিটি নির্দেশ পালন করারই অপর নাম হজ্ব। হাজীকে কখনো দেখা যায় মক্কায়, কখনো মিনায়, কখনো আরাফায়, কখনো মুযদালিফায়, আবার কখনো পাহাড়-পর্বতে, কখনো সমতল ভূমিতে, কখনো সে হাটে, কখনো বসে থাকে, কখনো দৌড়ায়, কখনো তাবু স্থাপন করছে, কখনো তা খুলে ফেলছে; একেবারে হুকুমের গোলাম। তার নিজস্ব ইচ্ছা ও মতামত বলতে কিছু নেই। নেই ইচ্ছামত কোন কিছু করার স্বাধীনতা। মিনায় শান্ত হয়ে নিঃশ্বাস ফেলবার আগেই এসে যায় আরাফায় যাওয়ার নির্দেশ। আরাফায় সারা দিন অবস্থান করে মনে চায় এখানেই রাতটুকু থেকে যেতে, কিন্তু হুকুম আসে মুযদালিফা যাওয়ার। আরাফায় মাগরিবের ওয়াক্ত হলে চিরাচরিত অভ্যাসানুযায়ী মনে চায় নামায আদায় করতে, কিন্তু নির্দেশ আসে সাবধান! সাবধান! নামায পড়া নিষেধ। নামায বর্জন করে মুযদালিফায় যাও! কারণ সে নামায বা কোন ইবাদতের গোলাম নয়, সে তো আল্লাহর গোলাম। তাই আল্লাহর নির্দেশে আজ সে মুযদালিফায় এশার ওয়াক্তে মাগরিব পড়বে।
এক কথায় নিজের সকল কামনা বাসনা ও ইচ্ছা শক্তিকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিবেদন করার বাস্তব ট্রেনিং নিয়ে হাজীরা দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার অনুষ্ঠান, রাজনীতি সমাজনীতিসহ নিজ নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিক্ষার অনুসরণ করেন, তারাই প্রকৃত হাজী।

উস্তাযুল হাদীস ওয়াত তাফসীর

জামিয়া সাঈদিয়া করীমিয়া, ভাটারা-ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হ্জ শেষে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার অনুষ্ঠান, রাজনীতি সমাজনীতিসহ নিজ নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিক্ষার অনুসরণ করেন, তারাই প্রকৃত হাজী।

হজ্ব : স্বীয়কামনা ও ইচ্ছাশক্তিকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিবেদনের বাস্তব অনুশীলন

আপডেট সময় : ১১:১১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

মুফতী হুসাইন আহমদ জিয়া :
মহান স্রষ্টা অসংখ্য অগণিত মাখলুক সৃষ্টি করে সাজিয়েছেন এ বসুন্ধরা। সব মাখলূকের মাঝে মানুষই সেরা সৃষ্টি। মানুষকেই আল্লাহপাক দিয়েছেন চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি ও মেধা। এই বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ তার লাভ-ক্ষতি, মঙ্গল-অমঙ্গল অনুধাবন করে। সফলতা ও উন্নতির নানা পথ আবিষ্কার করে। তাই দেখা যায়, মানুষ মাত্রই নিজ বুদ্ধির উপর যারপরনাই আস্থাবান। এ জন্যই হয়ত ‘নিজের বুদ্ধিতে ফকীর হওয়াও ভাল’ এরকম বাগধারা সমাজে চালু রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় মানুষকে তার বুদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জরুরী হয়ে পড়ে। আর এতে দোষেরও কিছু নেই। কারণ, বিপ্লব-বিদ্রোহ ছাড়াই যে জীবন পার হয়ে যায়, সেটা আর কিসের জীবন! তাই প্রতি দিনের অনুসৃত রীতি-নীতি, পদ-পদবী, বানোয়াট আভিজাত্য ও ঠুনকো সামাজিকতার সকল বন্ধন ছিন্ন করে মুক্ত -স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন বুদ্ধির যাতাকলে পিষ্ট জীবনকে কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রেমময় আত্মার পরশে সমর্পণ করা। আর এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহপাক আমাদেরকে হজ্বের বিধান দান করেছেন।
সামাজিক রীতিনীতি ও সোসাইটির বন্ধনে যে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। কে বলে সে স্বাধীন? যে স্বীয় অভ্যাস, প্রবৃত্তি ও তৃপ্তিদায়ক বিলাস দ্রব্রের মাঝে ডুবে আছে সারাক্ষণ সে একত্ববাদের পুজারী হয় কিভাবে? নিজের বুদ্ধির উপরই যার একমাত্র আস্থা, যে তার ভঙ্গুর ও সীমিত বুদ্ধির সাহায্যে পার্থিব লাভের দিকটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কোন আমল ও আনুগত্যের প্রেরণা অনুভব করেনা, তাকে অনুগত ও বিশ্বস্ত বলা যায় কিভাবে? হজ্বের প্রতিটি কাজই বুদ্ধি ও বস্তু পুজারীদের ভিত্তি হীন ধ্যান-ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। কোনরূপ প্রশ্ন ব্যতিরেকে প্রতিটি হুকুমকে আল্লাহর হুকুম মনে করে যথাযথভাবে পালন করার যোগ্যতা সৃষ্টি করাই হজ্বের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই বাছাই না করে যে মেধা ও বুদ্ধি এ যাবৎ কোন কিছুই গ্রহণ করতো না, কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে এই পদ থেকে নামিয়ে ফেলতে হয় এবং কেবল আল্লাহর হুকুম মনে করে হজ্বের যাবতীয় কাজগুলি পালন করে যেতে হয়।
ইমাম গাযালী রহ.খুবই চমৎকারভাবে হজ্বের তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন। দ্বীনের এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি অত্যন্ত হৃদয় গ্রাহী ব্যাখ্য কেশ ও ধুলিমলিন বেশে হাজীর হয়ে কাবার মালিকের মহত্ব ও বড়ত্বের সামনে আপন অস্তিত্বের কথা ভুলে যায় এবং চরম দীনতা-হীনতা প্রকাশ করতঃ আনুগত্যের শীর নত করে দেয়। যাতে করে গোলামী ও দাসত্বের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্যের মাঝে কোনরূপ ত্রুটি না থাকে। এজন্যই তাদেরকে এমন কিছ ুকাজের হুকুম দেয়া হয়েছে, মানবমনের সাথে যার কোনরূপ সম্পর্ক নেই, বিবেকবুদ্ধি দিয়েও তা স্পর্শ করা যায়না। যেমন- জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও সাফা-মারওয়ায় সায়ী করার হুকুম পালনের মাঝে রয়েছে নিঃশর্ত গোলামী ও পরিপূর্ণ আনুগত্য। কিন্তু বুদ্ধি-বিবেক এর মর্মার্থ অনুধাবনে সম্পূর্ণ অক্ষম। এ কাজগুলো কেবল নিঃশর্ত আনুগত্যের প্রেরণা থেকেই পালন করা হয়। যেহেতু এগুলো আল্লাহর হুকুম, তাই অবশ্যই পালনীয়-এ বোধ জাগ্রত করে বুদ্ধির সকল আধিপত্য খর্ব করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
বস্তুতঃ নির্দেশ পালনই কংকর নিক্ষেপের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। পরিপূর্ণ গোলামী ও দাসত্বের বহিঃপ্রকাশই কাম্য। এখানে বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির কোন স্থান নেই। এর আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। কারণ এখানেই অভিশপ্ত শয়তান তাঁকে বিভ্রান্তা করার চেষ্টা করেছিল। তখন আল্লাহপাক হুকুম দিলেন ওকে কংকর নিক্ষেপ করে তাড়িয়ে দাও। ওর সকল আশা চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দাও। যদি কেউ এরূপ ধারণা করে যে, তখন শয়তান বাস্তব আকৃতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, এজন্য হযরত ইবরাহীম আ. তাকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। আমার সামনে তো শয়তান নেই, আমি কেন কংকর নিক্ষেপ করবো? তাহলে তার বুঝা উচিত যে, এ ধারণাও শয়তানেরই সৃষ্ট। শয়তানই এই ধারণা তোমার মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছে। যাতে শয়তানকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার যে স্পৃহা তোমার মাঝে লুকায়িত ছিল, তা একবারে নিস্তেজ হয়ে যায়। তোমার বুঝা উচিত যে, দৃশ্যত তুমি জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপ কর, কিন্তু বাস্তবে তা শয়তানের মুখের উপর পতিত হয় এবং তার কোমর ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। কেননা শয়তানের সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছনা ও অপমান এরূপ হুকুম পালনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে, যা শুধুমাত্র আল্লাহর মহত্ব ও নিঃশর্ত আনুগত্যের চেতনা নিয়ে সম্পাদিত হয়। যেখানে বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির কোনরূপ সংশ্রব নেই।
লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, হজ্বের সমস্ত রুকন ও যাবতীয় কর্মকা- নিঃশর্ত আনুগত্য ছাড়া কিছু নয়। বিনা বাক্য ব্যয়ে প্রতিটি নির্দেশ পালন করারই অপর নাম হজ্ব। হাজীকে কখনো দেখা যায় মক্কায়, কখনো মিনায়, কখনো আরাফায়, কখনো মুযদালিফায়, আবার কখনো পাহাড়-পর্বতে, কখনো সমতল ভূমিতে, কখনো সে হাটে, কখনো বসে থাকে, কখনো দৌড়ায়, কখনো তাবু স্থাপন করছে, কখনো তা খুলে ফেলছে; একেবারে হুকুমের গোলাম। তার নিজস্ব ইচ্ছা ও মতামত বলতে কিছু নেই। নেই ইচ্ছামত কোন কিছু করার স্বাধীনতা। মিনায় শান্ত হয়ে নিঃশ্বাস ফেলবার আগেই এসে যায় আরাফায় যাওয়ার নির্দেশ। আরাফায় সারা দিন অবস্থান করে মনে চায় এখানেই রাতটুকু থেকে যেতে, কিন্তু হুকুম আসে মুযদালিফা যাওয়ার। আরাফায় মাগরিবের ওয়াক্ত হলে চিরাচরিত অভ্যাসানুযায়ী মনে চায় নামায আদায় করতে, কিন্তু নির্দেশ আসে সাবধান! সাবধান! নামায পড়া নিষেধ। নামায বর্জন করে মুযদালিফায় যাও! কারণ সে নামায বা কোন ইবাদতের গোলাম নয়, সে তো আল্লাহর গোলাম। তাই আল্লাহর নির্দেশে আজ সে মুযদালিফায় এশার ওয়াক্তে মাগরিব পড়বে।
এক কথায় নিজের সকল কামনা বাসনা ও ইচ্ছা শক্তিকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিবেদন করার বাস্তব ট্রেনিং নিয়ে হাজীরা দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার অনুষ্ঠান, রাজনীতি সমাজনীতিসহ নিজ নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিক্ষার অনুসরণ করেন, তারাই প্রকৃত হাজী।

উস্তাযুল হাদীস ওয়াত তাফসীর

জামিয়া সাঈদিয়া করীমিয়া, ভাটারা-ঢাকা