০৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে মানববন্ধন ভোলা জেলা ওলামা তলাবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করায় বিমানবন্দরে এফবিসিসিএফএএ’র সংবাদ সম্মেলন ক্যারিয়ার বাংলাদেশের গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত দলিপাড়া ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবু জাফর আলম উত্তরা ১১ নং সেক্টর ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া সেই গুলিবিদ্ধ ইমরান কে দেখতে গেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর একাত্তরের ন্যায় ২৪ যোদ্ধারাও পাবে সকল সুবিধা-মুস্তাফিজ সেগুন গুম-খুনের শিকার ও চব্বিশের শহীদ পরিবারকে ঈদ উপহার দিলেন বিএনপি নেতা আমিনুল হক জাতিসঙ্ঘ শূন্য বর্জ্য দিবসে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানালেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রসঙ্গে ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইনের অভিমত

নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৪:২৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস অব টাইম অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন
ইসলামি ব্যাংক বোর্ড অব ডিরেক্টরস কর্তৃক পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক জনাব মাওলানা ওবায়দু্ল্লাহ হামযা (হাফি.)কে শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুরনো কথা নতুন করে চর্চিত হচ্ছে। জনাব মাওলানা ওবায়দু্ল্লাহ হামযা (হাফি.)-এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। তিনি প্রাজ্ঞ, সাহিবে ইলম ও সাহিবে কামাল। ১৩ বছর তিনি ইসলামি অর্থনীতির ওপর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা বিষয়ে রয়েছে তাঁর স্পেশালাইজেশন।
ইসলামি ব্যাংক একটি বিশেষ ইসলামি দলের কর্মিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত, লালিত ও বর্দ্ধিত হলেও সময়ে সময়ে অন্য ঘরানার স্কলারদেরকেও শরিয়া কাউন্সিলের সদস্য বা চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার নজির আছে। বর্তমানে নতুন বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাদের আস্থাভাজন ও পছন্দের মানুষদের নিয়োগ করবেন এটা স্বাভাবিক। আগামীতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশের যদি পরিবর্তন ঘটে হয়তো আমরা নতুন নতুন মুখ দেখবো। এটা ইতিহাসের গতি প্রকৃতি।
এসব নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক। সাধারণত ২ বছরের জন্য হয়ে থাকে। বোর্ড অব ডিরেক্টরস নিয়োগকৃত ব্যক্তির ভাল পারফর্মেন্স সাপেক্ষে ইচ্ছে করলে নবায়ন করতে পারেন। নবায়ন করে করে কেউ কেউ ২০/২৫ বছর ছিলেন এমন দৃষ্টান্ত আছে। তবে এক পদে সারাজীবন কেউ থাকেন না।
এ কথা সত্য বর্তমান পরিস্থিতিতে শতভাগ ইসলামি ব্যাংকিং সম্ভব নয়। কারণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক, যা সুদনির্ভর। রাষ্ট্রব্যবস্থাও ইসলামি নয়৷ তবে বিজ্ঞ মুফতি ও ইসলামি স্কলাররা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিভাবে ব্যাংকিং লেনদেন, বিনিয়োগ ও লভ্যাংশকে সুদমুক্ত করা যায়। কারণ ব্যাংক ছাড়া বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, ফরেন রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি অসম্ভব। অধিকন্তু ইসলামি ব্যাংক একটি সন্দেহজনক তহবিল পৃথক করে রাখে যেখান থেকে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেয় না।
ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে বায়তুশ শরফের পীর সাহেব হযরত মাওলানা শাহ আবদুল জাব্বার (রহ.), বায়তুল মুকাররমের খতিব হযরত মাওলানা ওবায়দুল হক (রহ.), হযরত মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী (হাফি), বাহারুল উলুম হযরত মাওলানা কুতুবউদ্দিন (রহ.) ব্যাংকিং সেক্টরকে ইসলামিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খতিব হযরত মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আনজাম দেন। এছাড়া তিনি ছিলেন ইসলামি ব্যাংকসমূহের সেন্ট্রাল শরিয়া কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বিশেষ করে সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, শাহ জালাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সানফ্লাওয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রূপালী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ বিভিন্ন ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে যাকাতের সামাজিকায়ন ও সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া ফকিহুল মিল্লাত হযরত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.) আল আরাফাহ ব্যাংকে, হযরত মাওলানা আবদুল হালিম বোখারী (রহ.) শাহজালাল ব্যাংকে, মুফতি সাঈদ আহমদ মুজাদ্দেদী (হাফি.) আল আরাফাহ ব্যাংকে ও জনাব মাওলানা মুফতি শাহেদ রহমানী (হাফি.) শাহজালাল ব্যাংকের শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শায়খুল ইসলাম মুফতি তকি ওসমানী (হাফি.) পাকিস্তান, আরবদেশ ও ইউরোপের ১২ টি ব্যাংকের শরিয়া এডভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান। যার কারণে ২০১৪ সালে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পুরষ্কার লাভ করেন তিনি। তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিজান ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তাও তিনি।
ব্যাংকের কার্যক্রমকে ইসলামিকরণে কোন বিজ্ঞ মুফতি ও বিশেষজ্ঞের কোন যৌক্তিক ফিকহি মতামত থাকলে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁরা নিশ্চয় বিবেচনায় নেবেন। ভিন্নমত থাকতে পারে, থাকতে পারে ফিকহি ইখতিলাফও। আমাদের কথা, পোস্ট ও মন্তব্য যেন শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সীমা অতিক্রম না করে। আলোচনা অ্যকাডেমিক হওয়া একান্ত কাম্য।

(ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন সাহেবের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।)

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রসঙ্গে ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইনের অভিমত

আপডেট সময় : ০৪:২৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩
ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন
ইসলামি ব্যাংক বোর্ড অব ডিরেক্টরস কর্তৃক পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক জনাব মাওলানা ওবায়দু্ল্লাহ হামযা (হাফি.)কে শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুরনো কথা নতুন করে চর্চিত হচ্ছে। জনাব মাওলানা ওবায়দু্ল্লাহ হামযা (হাফি.)-এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। তিনি প্রাজ্ঞ, সাহিবে ইলম ও সাহিবে কামাল। ১৩ বছর তিনি ইসলামি অর্থনীতির ওপর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা বিষয়ে রয়েছে তাঁর স্পেশালাইজেশন।
ইসলামি ব্যাংক একটি বিশেষ ইসলামি দলের কর্মিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত, লালিত ও বর্দ্ধিত হলেও সময়ে সময়ে অন্য ঘরানার স্কলারদেরকেও শরিয়া কাউন্সিলের সদস্য বা চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার নজির আছে। বর্তমানে নতুন বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাদের আস্থাভাজন ও পছন্দের মানুষদের নিয়োগ করবেন এটা স্বাভাবিক। আগামীতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশের যদি পরিবর্তন ঘটে হয়তো আমরা নতুন নতুন মুখ দেখবো। এটা ইতিহাসের গতি প্রকৃতি।
এসব নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক। সাধারণত ২ বছরের জন্য হয়ে থাকে। বোর্ড অব ডিরেক্টরস নিয়োগকৃত ব্যক্তির ভাল পারফর্মেন্স সাপেক্ষে ইচ্ছে করলে নবায়ন করতে পারেন। নবায়ন করে করে কেউ কেউ ২০/২৫ বছর ছিলেন এমন দৃষ্টান্ত আছে। তবে এক পদে সারাজীবন কেউ থাকেন না।
এ কথা সত্য বর্তমান পরিস্থিতিতে শতভাগ ইসলামি ব্যাংকিং সম্ভব নয়। কারণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক, যা সুদনির্ভর। রাষ্ট্রব্যবস্থাও ইসলামি নয়৷ তবে বিজ্ঞ মুফতি ও ইসলামি স্কলাররা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিভাবে ব্যাংকিং লেনদেন, বিনিয়োগ ও লভ্যাংশকে সুদমুক্ত করা যায়। কারণ ব্যাংক ছাড়া বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, ফরেন রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি অসম্ভব। অধিকন্তু ইসলামি ব্যাংক একটি সন্দেহজনক তহবিল পৃথক করে রাখে যেখান থেকে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেয় না।
ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে বায়তুশ শরফের পীর সাহেব হযরত মাওলানা শাহ আবদুল জাব্বার (রহ.), বায়তুল মুকাররমের খতিব হযরত মাওলানা ওবায়দুল হক (রহ.), হযরত মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী (হাফি), বাহারুল উলুম হযরত মাওলানা কুতুবউদ্দিন (রহ.) ব্যাংকিং সেক্টরকে ইসলামিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খতিব হযরত মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আনজাম দেন। এছাড়া তিনি ছিলেন ইসলামি ব্যাংকসমূহের সেন্ট্রাল শরিয়া কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বিশেষ করে সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, শাহ জালাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সানফ্লাওয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রূপালী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ বিভিন্ন ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে যাকাতের সামাজিকায়ন ও সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া ফকিহুল মিল্লাত হযরত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.) আল আরাফাহ ব্যাংকে, হযরত মাওলানা আবদুল হালিম বোখারী (রহ.) শাহজালাল ব্যাংকে, মুফতি সাঈদ আহমদ মুজাদ্দেদী (হাফি.) আল আরাফাহ ব্যাংকে ও জনাব মাওলানা মুফতি শাহেদ রহমানী (হাফি.) শাহজালাল ব্যাংকের শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শায়খুল ইসলাম মুফতি তকি ওসমানী (হাফি.) পাকিস্তান, আরবদেশ ও ইউরোপের ১২ টি ব্যাংকের শরিয়া এডভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান। যার কারণে ২০১৪ সালে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পুরষ্কার লাভ করেন তিনি। তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিজান ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তাও তিনি।
ব্যাংকের কার্যক্রমকে ইসলামিকরণে কোন বিজ্ঞ মুফতি ও বিশেষজ্ঞের কোন যৌক্তিক ফিকহি মতামত থাকলে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁরা নিশ্চয় বিবেচনায় নেবেন। ভিন্নমত থাকতে পারে, থাকতে পারে ফিকহি ইখতিলাফও। আমাদের কথা, পোস্ট ও মন্তব্য যেন শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সীমা অতিক্রম না করে। আলোচনা অ্যকাডেমিক হওয়া একান্ত কাম্য।

(ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন সাহেবের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।)