০৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে মানববন্ধন ভোলা জেলা ওলামা তলাবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করায় বিমানবন্দরে এফবিসিসিএফএএ’র সংবাদ সম্মেলন ক্যারিয়ার বাংলাদেশের গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত দলিপাড়া ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবু জাফর আলম উত্তরা ১১ নং সেক্টর ও দেশবাসীকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া সেই গুলিবিদ্ধ ইমরান কে দেখতে গেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর একাত্তরের ন্যায় ২৪ যোদ্ধারাও পাবে সকল সুবিধা-মুস্তাফিজ সেগুন গুম-খুনের শিকার ও চব্বিশের শহীদ পরিবারকে ঈদ উপহার দিলেন বিএনপি নেতা আমিনুল হক জাতিসঙ্ঘ শূন্য বর্জ্য দিবসে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানালেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ইসলামে ব্যবসার নিয়ম

ইসলাম ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০২:৫০:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩ ৩২ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস অব টাইম অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হাফেজ মাওলানা মাছরুরুল হক :

ব্যবসা-বাণিজ্য তৈরি হয়েছে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য। কিস্তু নিয়ম-নীতি না মানার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা বিভিন্ন সমস্যার জন্ম হচ্ছে। অথচ আমাদের ইসলাম ধর্মে রয়েছে সুন্দর সুন্দর বিধান। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে

“ব্যবসা ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান” সম্পর্কে  সাম্যক ধারণা লাভ করার জন্য নাতিদীর্ঘ একটি লেখা উপস্থাপন করা হলো।আশা করি এই লেখা থেকে পাঠকগণ উপকৃত হবেন।

সূচনা :

আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেটা শুধু ধর্ম-কর্ম নয়, এখানে সব কিছুর সমাধান রয়েছে। তার মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এটা একটা ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা মনে করি যে, ব্যবসা দুনিয়ার কাজ। মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে দুনিয়ার সহায় সম্পদ অর্জন করে। কিন্তু বাস্তবতা হল এটা আখিরাতের একটা পুঁজি। ব্যবসার মাধ্যমে যেমনিভাবে দুনিয়াতেও লাভবান হওয়া যায়, তেমনিভাবে আখিরাতেও লাভবান হওয়া যায়। অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে ব্যবসার জন্য।

কুরআন  হাদিসে ব্যবসা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে :    

ব্যবসার কথা কুরআনুল করিমের অনেক আয়াতের মধ্যে এসেছে। তাহাজের ও তিজাতুল শব্দ এসেছে। হাদিসের মধ্যেও তুজ্জা ও তাহাজের শব্দ এসেছে। তাহাজের শব্দের অর্থ হল ব্যবসায়ী এবং তুজ্জা শব্দের অর্থও ব্যবসায়ী। ব্যবসা আল্লাহপাক হালাল করেছেন। এটাও আল্লাহপাক কালামে পাকের মধ্যে ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহপাকের অনেক নবী রাসুলগণের অনেকেই বড় বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া ও এর দ্বারা কিছু সম্পদ উপার্জন করা এবং প্রয়োজনে সেটা জমা করা যায়। সেই সম্পদকে যারা অসহায় আছে তাদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া, পরিবার পরিজনের খরচ মেটানো এবং নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করা যায়। এই সমস্ত কাজের জন্য ব্যবসা অত্যন্ত জরুরী এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

হাদিস শরীফে এসেছে মানুষের রিজিকের দশ ভাগের নয় ভাগ ব্যবসার মধ্যে নিহিত। স্বয়ং মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি দীর্ঘ বারো বছর ব্যবসা করেছেন। প্রথমত : তিনি শরিকানা ও মুদারাবা ব্যবসা করেছেন। হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার পুঁজি এবং উনার  শ্রম। নিজের পুঁজি দিয়েও তিনি ব্যবসা করেছেন। স্বয়ং  রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ব্যবসা করেছেন এটাই যথেষ্ট ব্যবসার গুরুত্ব বুঝার জন্য। নবী  নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন, ব্যবসায়ীদেরকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন,  সেই সাথে ব্যবসার বিভিন্ন ফযিলত বয়ান করেছেন এবং  সাহাবীদেরকেও তিনি ব্যবসা শিখিয়েছেন।  হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা এছাড়াও অনেক সাহাবায়ে কেরাম  ব্যবসা করতেন ।

আল্লাহ পাক কালামে পাকের মধ্যে বলেছেন, তিনি ব্যবসা, বেচাকেনাকে হালাল করেছেন। এটি মানুষের রিজিক সন্ধানের জন্যই করা দরকার।  কুরআনুল কারিমের আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, যখন সালাত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ তালাশ কর।  এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে রিজিকের কথা বলা হয়েছে। সেই রিজিকের নয় ভাগ নিহিত রয়েছে ব্যবসার মধ্যে। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকের মধ্যে বলেছেন, হালাল রিজিক অনুসন্ধান করা একটা ফরজ কাজ। অন্যান্য ফরজ কাজের পরে, নামাজ, রোজা ইত্যাদি যেমন ফরজ কাজ, তেমন হালাল রিজিক অনুসন্ধান করাও একটি ফরজ কাজ। আর হালাল রিজিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করা এটা অনেক সহজ। এটার দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ব্যবসার ফজিলত অনেক রয়েছে। ব্যবসার কথা কালামে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও করেছেন,  সাহাবায়ে কেরামও করেছেন। তিনি ব্যবসার নীতিমালার শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলাম যেহেতু সার্বজনীন এবং সবকিছুর সমাধান এতে রয়েছে। সে হিসেবে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য করার দিকটাও ইসলাম রেখেছে, যাতে করে মানুষ ইসলামিক বিধান মেনে ব্যবসা করতে পারে।

ব্যবসার মধ্যে ছল চাতুরী :

ব্যবসার মধ্যে বিভিন্ন ছল চাতুরী, বিভিন্ন প্রতারণা, ধোঁকা ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু ইসলামি শরীয়ত এসে এই সমস্ত কিছুকে দূর করে দিয়ে সঠিক অর্থে ব্যবসা করার শিক্ষা দিয়েছে। এমন অনেক ব্যবসা আছে, যার মাধ্যমে মানুষ ঠকে যায়, ঠকানো হয় এবং প্রতারণা করা হয়। এর মারাত্মক ক্ষতির দিকগুলো কুরআন হাদিসে বয়ান করা হয়েছে।

ওজনে কম দেওয়া :

ওজনে কম দেওয়া বা মাপে কম দেওয়ার কথা কুরআনে স্পষ্ট বয়ান করা হয়েছে।ওজনে কম দেওয়া এটা বড় মারাত্মক অপরাধ। জাহিলী যুগের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই প্রথাটা ছিল। তারা নিজেরা যখন মেপে নিত তখন ভাল করে মেপে নিত কিন্তু অন্যকে মেপে দেওয়ার সময় কম দিত। আল্লাহ পাক কুরআন আল কারীমের আয়াত নাযিল করে তাদের এই মন্দ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে বলে দিয়েছেন যে, এটি বড় ভয়ানক আজাবের কারণ। তাদের জন্য দুর্ভোগ এবং অয়েল নামের জাহান্নাম অপেক্ষা করছে।এখানে শরিয়ত-ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তুমি ওজনের মধ্যে কম দিতে পারবে না। যদি দাও তবে হালাল ব্যবসার সাথে সামান্য ওজনে কম দেওয়ার কারণে হারাম মিশ্রিত হয়ে গেল। সামান্য হারাম যদি মিশ্রিত হয়ে যায়, তবে সব মাটি হয়ে গেল।

ব্যবসার মধ্যে ধোঁকাবজি :

ইসলামী শরীয়ত এসে  নীতিমালা শিক্ষা দিয়েছে যে, ব্যবসার পদ্ধতি বা ধরণ কেমন হবে। ব্যবসার মধ্যে একটা দিক আছে যেটাকে গবনে ফাহিস বলা হয়। এর অর্থ হল অনেক বেশি ঠকানো। একটি দ্রব্য পাঁচ টাকা দিয়ে খরিদ করে সেটাকে যদি কেউ পাঁচহাজার টাকা দামে বিক্রয় করে। এই জাতীয় ব্যবসাও নিষিদ্ধ। এখন দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ মানুষ এমন ব্যবসা করছে যে, ব্যবসার মাধ্যমে সে ক্রেতাকে ব্যাপকভাবে ঠকাচ্ছে। আকাশ-পাতাল দাম নির্ধারণ করে ক্রেতাকে ধোঁকার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ফলে এটিও ইসলাম নিষেধ করেছে। ব্যবসা এইভাবে করা যাবে না।  এক হাদিসের মধ্যে আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  ব্যবসায়ীরা কেয়ামতের দিন পাপিষ্ঠদের সাথে পাপিষ্ঠ হিসেবে উঠবে। তবে ব্যবসায়ী যদি মুত্তাকী অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা হয়, সে যদি ব্যবসার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে, নেক্কার ও  সত্যবাদী হয়, তার জন্য রয়েছে পুরস্কার। অন্য হাদিসের মধ্যে তিনি বলেছেন, সত্যবাদী, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী  দুনিয়াতে তো লাভবান হবেই বরং কেয়ামতের ময়দানে সুপার হাইকোয়ালিটির জান্নাত লাভ করবে। এখানে তাঁরা  নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে তার অবস্থান হবে। এটি ব্যবসার কারণে হবে।

আমরা যারা ব্যবসা করব, তাদরেকে সততা, আমানতদায়িতা ও তাকওয়া রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অনেক ঘটনা ঘটছে। সাধারণত ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কসম ও শপথ করে।  যেমন- একটি পণ্য সে ক্রয় করল দশ টাকা দিয়ে কিন্তু বেশি মূল্যে বিক্রয় করার জন্য ক্রেতার কাছে বলে আল্লাহর কসম এই পণ্যটি বিশ টাকা দিয়ে খরিদ করেছি। এই একটা মিথ্যা কসম করল। আর এই মিথ্যা কসমের কারণে তারা পাপিষ্ঠ হিসেবে কেয়ামতের ময়দানে উঠবে।

অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা পুরাতন পণ্যের মধ্যে নতুন করে ডেট সংযুক্ত করে বাজারে বিক্রয় করে। এতে মানুষ ধোঁকাগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষ ভেজাল পণ্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইসলাম এটাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে। এই ধোঁকার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে-আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, যে ধোঁকাবাজি করে সে আমার দলভুক্ত নয়।

একবার আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার বাজারে গেলেন। এক ব্যবসায়ির শস্যজাতীয় পন্যের স্তুপ রাখা আছে। সেই পন্যের স্তুপের উপরে শুস্ক আছে। আল্লাহর রাসুল এর ভেতরে হাত প্রবেশ করালেন। তিনি দেখলেন যে ভেতরের শস্যগুলো ভেজা। তিনি বললেন কি ব্যাপার? এই ভেতরের পণ্যগুলো ভেজা কেন? তখন ব্যবসায়ী বললেন যে, বৃষ্টিতে শস্যগুলো ভিজে গিয়েছে। আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, তুমি ভেজাটা কেন উপরে রাখলে না, যাতে করে ক্রেতা ধোঁকাগ্রস্থ না হয়। এইভাবে ধোঁকা থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামে এই দিকটা রক্ষা করেছে।

অনেক সময় আমাদের দেশে যেটা হয় যে, ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসার মাল আমাদের দেশেই বা আমাদের ঘরেই তৈরি হয়। কিন্তু এটাকে অনেক সময় বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বা মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য বলা হয় যে এটা মেড ইন জাপান, মেড ইন আমেরিকা, মেড ইন ইন্ডিয়া ইত্যাদি। এটা করা হয় পণ্যটিকে আকর্ষণীয় করে বেশি দামে বিক্রয় করার জন্য। অথচ এটি নিজের ঘরেই তৈরি। এটা চরম ধোঁকাবাজি।  এই ব্যবসার উপার্জিত আয় সবটাই হারাম হয়ে গেল। এই ভাবে সমাজে ঠকানোর বিভিন্ন পন্থা আছে।

আমরা দেখি যে, মাছের বাজারে এমন লাইটিং করে রাখা হয় যে লাইটিংএর কারণে পচা মাছও চকচকে উজ্জ্বল দেখা যায়। মানুষ মনে করে কত তাজা মাছ! কাপড়ের দোকানে গেলে সেখানে এমন ভাবে লাইটিং করা হয় যাতে কাপড়ের রং চেঞ্জ হয়ে যায়। মানুষ মনে করে কত উজ্জ্বল রঙের কাপড়। অথচ পরে দেখা যায় কাপড়ের কালারটা সঠিক না। এক্ষেত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি অনেক বড় মুফতি ছিলেন। চার মাযহাবের চার ইমামের মধ্যে সর্ব প্রধান এবং শ্রেষ্ঠ ইমাম ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। তিনি দুপুরবেলা একদিন দোকান বন্ধ করে ফেলছেন। তাঁকে সাথীরা জিজ্ঞেস করলেন তিনি দোকান বন্ধ করছেন কেন? তখন তিনি বলেন, দেখনা আকাশে মেঘ জমেছে। তখন সাথীরা বলে আকাশে মেঘ জমার সাথে কাপড়ের দোকান বন্ধ করার সম্পর্ক কি? তিনি বললেন যে, মেঘ জমার কারণে পরিবেশটা এমন হয়ে গিয়েছে যে একটু ঘোলাটে পরিবেশ হয়ে গিয়েছে। কাপড়ের যেটা অরিজিনাল রং সেটা একটু চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।  মানুষ যেন কাপড়ের সঠিক রংটা না বুঝে নিয়ে যায় তবে ধোঁকা গ্রস্থ হবে। এজন্য আমি এখন বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছি।  যখন পরিস্কার আবহাওয়া হবে সবকিছু ভাল হয়ে যাবে অরজিনাল রং যখন ফুটে উঠবে তখন আমি বিক্রয় শুরু করব। যাতে মানুষ ধোকা গ্রস্থ না হয়।এটার নাম হল তাকওয়া। এটার নাম হল আল্লাহ ভীতি।  কোনভাবেই ব্যবসার মধ্যে হারামকে মিশ্রিত করা যাবে না। অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বা ঠকিয়ে ব্যবসা করা যায় না।

আমাদের ব্যবসার মধ্যে দেখা যায় অনেক দোকানে লিখে রাখি বিক্রিত পণ্য ফেরত নেওয়া হয় না। অথচ শরীয়ত-ইসলামে এর নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেটাকে খেয়ারে রুইয়ত বা খেয়ারে আইব বলা হয়। অর্থাৎ মাল কেনার পরে যদি এর  মধ্যে ত্রুটি প্রকাশিত হয় তো এই মাল ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতার পুরোপুরি আছে। কারণ সে এই মাল ত্রুটিসহ কিনেনি। তার দৃষ্টিতে ভাল ছিল। কিন্তু ঘরে নেওয়ার পরে দেখা গেল মালটা ত্রুটিপূর্ণ বা যেমন চেয়েছিল তেমন হয় নি।

এখন অনলাইনের অনেক ব্যবসা রয়েছে, যেখানে ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে দেখানো হয়। কিন্তু ছবিতে দেখার পরে এবং যখন বাস্তবে হাতে এসে পৌঁছায় তখন এক রকম হয় না। এটি একটু ডিফারেন্স হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বেচাকেনার জন্য আগেই থেকে চুক্তি করে নেওয়া দরকার যে ক্রেতার সিদ্ধান্তটা সরাসরি দেখার উপর নির্ভরশীল। অনলাইনে বা সরাসরি ব্যবসা হোক। এমন সিদ্ধান্ত যখন নিবে যে, আমি সরাসরি পণ্য দেখে পছন্দ করে ক্রয় করব। আর যদি পণ্য পছন্দ না হয়, তবে পণ্য কিনব না। এটাকে খেয়ারে রুইয়ত বলা হয় অর্থাৎ দেখার ব্যপারে যে ইচ্ছা এই বিষয়ে ইসলাম শরীয়তে রয়েছে।  কিছু মাল থাকে যেগুলো ত্রুটিপূর্ণ। সে পণ্যগুলো ব্যবসায়ীদের উচিত খোলে রাখা।  তুমি এই ত্রুটি সহ যদি নাও তবে এত টাকা দাম দিয়ে নিতে পার। এইভাবে তাকে ধোঁকা না দিয়ে বরং তার সামনে এটাকে স্পষ্ট করে দেওয়া। এভাবে বিক্রয় করলে মানুষ ধোঁকাগ্রস্থ হবে না। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এমন ছিল। ওনারা এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন পৃথিবীতে। ক্রেতা মাল খরিদ করেছে এরপর ফেরত দিতে এসেছে তাঁরা হাসিমুখে ফেরত নিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ অনেক দোকানদার ভাইরা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শকে ধারণ করে রেখেছেন। তবে এই সংখ্যাটা খুব কম । যারা প্রয়োজনে মাল ফেরত নেয় এবং বলে যে পণ্য ফেরত নেওয়া হবে সমস্যা নেই। মানুষ ক্রয় করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে। সেজন্য যদি কেউ  ব্যবসায় এই পদ্ধতি গ্রহন করে যে, দোষ ত্রুটি প্রকাশ হবার পরে ফেরত নিবেন।  সেখানে দেখা যায় যে, ঐ ব্যবসায়ীর ব্যবসা আলহামদুলিল্লাহ আরও বেড়ে যায়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত আসে তার উপর। কিন্তু যদি কেউ কোনো রকমে ক্রেতাকে দিতে পারলেই হল এমন আচরণ করে। আর ভাবি আমার দায়বদ্ধতা নেই। তাকে দিয়ে দিলাম আমি টাকা পেয়ে গিয়েছি। আর ফেরত নেওয়া সম্ভব না। এইবার ঐ মানুষটা বাধ্য হয়েই খারাপ মাল গ্রহন করল। আমি তার টাকা নিয়ে অনেক ধনী হচ্ছি। তাহলে আমি হারাম মাল গ্রহণ করছি।  এই বিষয়গুলো ইসলামে স্পষ্ট রয়েছে। সততা, আমানতদারিতা এই বিষয়গুলো রক্ষা করলে তার জন্য রয়েছে সুসংবাদ। যদি এর ব্যাতিক্রম হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। কেয়ামতের ময়দানে সেই ব্যবসায়ীরা পাপিষ্ঠ হিসেবে উঠবে।

ব্যবসার মধ্যে আরো কিছু ধোঁকাবজি :

আমাদের সমাজে কিছু ব্যবসা এমন আছে, যেমন শেয়ার ব্যবসা, জায়গা জমিনের ব্যবসা, ফ্ল্যাট বেচা কেনার ব্যবসা ইত্যাদি। যেই মানের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে দেওয়ার কথা ছিল, সেই মানের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে হস্তান্তর করল না বা সময়মত হস্তান্তর করল না। তার টাকা নিয়ে সে অন্যকাজে লাগিয়ে তাকে অপেক্ষা করাল। এগুলো সবই ধোঁকাবাজি, প্রতারণা। এ জাতীয় ব্যবসার দ্বারা সে ভাল ব্যবসায়ী হিসেবে আখ্যায়িত হবে না। বরং ধোঁকাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। সমাজেও সে নিগৃহীত ও খারাপ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহর দরবারেও বান্দার হক নষ্ট করার কারণে পাকড়াও হবে এবং আল্লাহ পাকের আজাব পাবে।

শেয়ার মার্কেটে বিভিন্ন ব্যবসা আছে। কিছু ব্যবসা আছে এর মধ্যে হালাল এবং কিছু ব্যবসা আছে হারাম। পুঁজি নাই, পণ্য নাই, শুধু কাগজ বেচাকেনা। কাগজের মাধ্যমে দেখাচ্ছে যে তার মূল্য আপডাউন করছে। এই মিনিটের মধ্যে বাড়ছে আবার সেকেন্ডের মধ্যে কমে যাচ্ছে। যদি এগুলো শুধু কাগজ কলমের উপর হয়, তাহলে শেয়ার মার্কেটের এই ব্যবসা কিছুতেই হালাল হতে পারে না। হালাল হতে হলে তার পণ্য থাকতে হবে যে, পণ্য বেচাকেনার উপর দাম কমা বাড়ার বিষয়টা আছে। এর অনেক পার্ট আছে, বিশ্লেষণ আছে। যারা শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করেন তারাও এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছে শেয়ার মার্কেটের ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এই শেয়ার মার্কেটের ব্যবসায় নামা উচিত। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে এলেম অর্জন করা প্রত্যেকটা মুসলমানদের জন্য ফরজ। আমি যে কাজ করতে যাচ্ছি বা ব্যবসা করতে যাচ্ছি তার এলেম অর্জন করতে হবে। কোন ব্যবসা হালাল এবং কোন ব্যবসা হারাম, কোন পণ্য বিক্রয় করা যাবে, কোন পণ্য বিক্রয় করা যাবে না, কোন পণ্য বিক্রয় করা মাকরু হবে, কোন পণ্য বিক্রয় করা হারাম হবে ইত্যাদি জানতে হবে। এমন কিছু পণ্য আছে যেগুলো বিক্রয় করা মুসলমানদের জন্য জায়েজই নেই।  মদ, শুকর ইত্যাদি বিক্রি করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই। খাওয়া তো দুরের কথা, এগুলো রাখা বা বিক্রি করা কোনটিই জায়েজ নেই। কিন্তু অনায়াশে মানুষ এই রকম নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে। এবং ক্রেতা অনায়া্শে ক্রয় করছে। এই নেশা জাতীয় দ্রব্য এর দ্বারা যে ব্যবসাটি করছে, অর্থ উপার্জন করছে,  এই উপার্জিত অর্থ কোনভাবেই হালাল নয়।এটি হারাম উপার্জন হচ্ছে। ব্যবসার এই সমস্ত দিকগুলো এটা অনেকে বুঝেই না। এটা আমরা পালন করি না। এটি পালন করলে তার জন্য অনেক সুসংবাদ রয়েছে। নবী রাসুলদের সাথে তার জান্নাত হবে।  পালন না করলে বড় ধরণের ক্ষতি অপেক্ষা করছে।

সুদী কারবারী ব্যবসা :

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক বলেছেন পাইকারি ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসা পাশাপাশি। সুদী কারবার এখন অনেক বেশি।  ব্যাংকিং যে ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে অধিকাংশ ব্যাংক দেখা যায় যে, সুদের কারবার করে। অথচ সুদ সম্পূর্ণ হারাম। বাহ্যত দেখা যায়, সুদ সম্পদ বাড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুদে সম্পদ কমিয়ে দিচ্ছে। আল্লাহপাক বলেছেন, রিবায় তোমার সম্পদকে কমিয়ে দিবে তুমি টের পাবে না। হয়তো বা মালের বিশাল স্তুপ হবে কিন্তু সেখানে বরকত থাকবে না। আবার হয়তো বা মালই কমে যাবে। তুমি দেখছ যে, একশ টাকা আমি ঋণ দিই তাহলে সেখানে একশ পাঁচ টাকা আসতেছে। মনে হয় পাঁচ টাকা বাড়ল। কিন্তু আল্লাহ পাক বলেছেন, সদকার দ্বারা মাল বাড়ে আর রিবার দ্বারা মাল কমে। এই মালের কোন বরকত থাকে না। এই মালের দ্বারা কেউ শান্তি পায় না।

সুদের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছে কিন্তু তার পরিবারে দেখেন শান্তি নেই। তার জীবনে শান্তি নেই। অশান্তি আর অশান্তি। কারণ ঐ সুদী মালের প্রভাব। আর সুদ একটা অমানবিক বিষয়। এটি এমনিতেই হারাম হয় নি! এর পেছনে অনেক বড় কারণ আছে। মানুষের রক্ত পানি করা টাকা সুদের কারবারিরা ফ্রি ফ্রি নিয়ে নিচ্ছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিচ্ছে। এখন বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের সমাজ এমন হয়ে গিয়েছে যে, গ্রামের সাধারণ মানুষ তার কাছে যদি পাঁচশত টাকা থাকে তাহলে এই টাকাটাও সেই ব্যক্তি সুদে লাগাচ্ছে। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে যদি, কোন ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন হয় তবে তাকে কর্জে হাসানা দাও। কর্জে হাসানা মানে হল তাকে সুদ মুক্ত ঋণ দাও, যাতে করে এই ঋণের মাধ্যমে তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে দান-সদকার চেয়েও কর্জে হাসানা অনেক বেশি সওয়াব রাখে। দান-সদকা তুমি তো নিজের মত করছ কিন্তু এই লোকটা যা চাচ্ছে সে তার প্রয়োজন থেকে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তুমি তার প্রয়োজন পূরণ করছ। আরও অনেক অনেক কারণ আছে।

আর ঋণ দিয়ে যদি তার থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়া হয় যে দশ টাকা দিলাম পনেরো টাকা নিব, কিংবা একহাজার টাকা দিলাম এগারশ বা বারশ টাকা নিব। তাহলে সেটি হারাম আয়। প্রত্যেকটা মানুষের পকেট যেন এক একটা ব্যাংক হয়ে গিয়েছ, এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ এটা একটা চরম অন্যায়। হাদিস শরিফে এসেছে আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নাম দেখেছেন। জাহান্নামে একটা লোককে দেখেছেন যে রক্তের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফেরেশতা তাকে বড় পাথর দিয়ে আঘাত করছে। আবার সে মাঝখানে চলে যাচ্ছে। আবার কিনারে আসতেছে কিন্তু আবার মাঝখানে চলে যাচ্ছে। এভাবে তার শাস্তি হচ্ছে।রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করলে সে কে? ফেরেশতারা বললেন, সে সুদ খোর।

সুদ যারা খায় তারা সরাসরি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই সম্পর্কিত অনেক আয়াত কুরআনুল কারিমে এসেছে। এটা একটা মারাত্মক ধরণের অন্যায় এবং বড় ধরণের একটা পাপ। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে উনার দাড়ি আছে, টুপি আছে, পাঞ্জাবি পায়জামা আছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তিনি হাজি সাহেব আরও অনেক কিছু। কিন্তু উনি সুদী কারবার করে। উনি সুদের সাথে জড়িত। তো দেখা গেল ইবাদত বন্দেগী সব শেষ। কিছুই তার কবুল হবে না। যদি হারাম খাদ্য দ্বারা তার শরীর গঠিত হয়, হারাম পোশাক তার শরীরে থাকে, হারাম তার পানীয় হয়। তবে তার ইবাদত বন্দেগী, নামাজ পড়া, হজ করা, রোজা রাখা কিছুই কবুল হবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সুদী কারবারটা সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে গিয়েছে। সুদী কারবার থেকে যারা প্রকৃত মুসলমান তারা অবশ্যই ফিরে আসার চেষ্টা করে এবং আল্লাহপাক তার অনেক বান্দাদের ফিরে আসার তৌফিক দান করুন।

ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাংক যে ঋণ দেয় সেক্ষেত্রেও দেখেন অনেকে বলে ইসলামি। কিন্তু ইসলামিক তখনই বুঝা যাবে যখন বাস্তবিকই তারা ইসলাম বা শরীয়ত সম্মতভাবে করে। এমনও আছে যে শরীয়া বোর্ডও আছে, বোর্ডের পরামর্শকও আছে। কিন্তু বাস্তবে ফিল্ডে কাজ করে না। এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। নিয়ম হল, যদি কাউকে ঋণ দেওয়া হয়, টাকার বিনিময়ে টাকা। দশ টাকা ঋণ দিলে বার টাকা ফেরত নিতে পারবে না তাকে দশ টাকাই ফেরত নিতে হবে। দুই টাকা অতিরিক্ত নিলে সেই টাকা সুদ হয়ে যাবে।

যদি এখানে এইটা করে যে, কারো বিল্ডিং বানানোর দরকার। সেখানে তাকে যদি বলে, বিল্ডিং বানাতে যে কয়েক হাজার ইট লাগবে, কত টন রড লাগবে, কতগুলো সিমেন্ট লাগবে, যার কাছে টাকা আছে সে ব্যাংক হোক বা ব্যক্তি মালিকানা যাই হোক না কেন, সে যদি বলে আমার কাছে পাঁচ কোটি টাকা আছে। আমি তোমাকে বিল্ডিং বানিয়ে দিব। অর্থাৎ তোমার বিল্ডিং বানাতে যা কিছু লাগবে তা আমি খরিদ করে তোমার কাছে বিক্রি করব। আমি যদি একটি ইট দশ টাকা দিয়ে কিনি তবে তোমার কাছে এগার টাকা দিয়ে বিক্রয় করব। তুমি আমাকে কিস্তিতে বা যেমনভাবে আমাকে অর্থ ফেরত দাও তোমার আমাকে এগার টাকা করেই দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক যদি তাকে লোন দেয়, তাহলে সেটি হালাল হবে। কিন্তু যদি মুখে মুখে বলে আর টাকা দিয়ে দেয়। এরপর যদি তারা অতিরিক্ত টাকা ফেরত নেয় তবে সেটা সুদ। এইজন্যই ব্যবসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  ইবাদত। এই ইবাদতের মাধ্যমে দুনিয়ার অনেক উন্নতি করা যায় এবং আখিরাতের উন্নতি অর্থাৎ জান্নাতে নবী-রাসুলদের সাথেও থাকা যায়। কিন্তু ব্যবসার এই শর্তগুলো পালন করা হয় না। ইসলামে যে ব্যবসার ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচা, মাপে কম দেওয়া থেকে বাঁচা, পঁচা জিনিসকে ভাল করে প্রচার না করা ইত্যাদি ইত্যাদি যে সমস্ত বিষয়গুলো আছে এই সব ধরণের ধোঁকামুক্ত থেকে যদি ব্যবসা করা যায়। নবী-রাসুলরা যেভাবে ব্যবসা করেছেন সেই ভাবে, তাহলে অনেক বড় সওয়াব।

আমরা যেভাবে ব্যবসা করতে পারি :

সকল ব্যবসায়ীরা ব্যবসার ক্ষেত্রে এই নিয়ত করতে পারে যে, আমি এইজন্য ব্যবসা করছি কারণ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসা করা একটা সুন্নত। রাসুলের সুন্নাহ পালন করার জন্য আমি ব্যবসা করছি। যদি এই নিয়ত করে তাহলে তার ব্যবসার সাথে সাথে সওয়াবও হবে। রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ীও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবসা করেন, তাহলে এই ব্যবসার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সে অনেক বড় লাভবান হবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম করলে সে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আল্লাহপাক আমাদের কে এই বিষয়গুলো বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমরা যারা মুসলিম এবং যারা ব্যবসা করছি, আমাদের সকলের ব্যবসায় ইসলামের বিধান মেনে চলা উচিত। কারণ এর মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

খতীব, লালমাটিয়া শাহী মসজিদ, লালমাটিয়া, ঢাকা

ভাইস প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসলামে ব্যবসার নিয়ম

আপডেট সময় : ০২:৫০:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩

হাফেজ মাওলানা মাছরুরুল হক :

ব্যবসা-বাণিজ্য তৈরি হয়েছে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য। কিস্তু নিয়ম-নীতি না মানার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা বিভিন্ন সমস্যার জন্ম হচ্ছে। অথচ আমাদের ইসলাম ধর্মে রয়েছে সুন্দর সুন্দর বিধান। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে

“ব্যবসা ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান” সম্পর্কে  সাম্যক ধারণা লাভ করার জন্য নাতিদীর্ঘ একটি লেখা উপস্থাপন করা হলো।আশা করি এই লেখা থেকে পাঠকগণ উপকৃত হবেন।

সূচনা :

আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেটা শুধু ধর্ম-কর্ম নয়, এখানে সব কিছুর সমাধান রয়েছে। তার মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এটা একটা ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা মনে করি যে, ব্যবসা দুনিয়ার কাজ। মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে দুনিয়ার সহায় সম্পদ অর্জন করে। কিন্তু বাস্তবতা হল এটা আখিরাতের একটা পুঁজি। ব্যবসার মাধ্যমে যেমনিভাবে দুনিয়াতেও লাভবান হওয়া যায়, তেমনিভাবে আখিরাতেও লাভবান হওয়া যায়। অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে ব্যবসার জন্য।

কুরআন  হাদিসে ব্যবসা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে :    

ব্যবসার কথা কুরআনুল করিমের অনেক আয়াতের মধ্যে এসেছে। তাহাজের ও তিজাতুল শব্দ এসেছে। হাদিসের মধ্যেও তুজ্জা ও তাহাজের শব্দ এসেছে। তাহাজের শব্দের অর্থ হল ব্যবসায়ী এবং তুজ্জা শব্দের অর্থও ব্যবসায়ী। ব্যবসা আল্লাহপাক হালাল করেছেন। এটাও আল্লাহপাক কালামে পাকের মধ্যে ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহপাকের অনেক নবী রাসুলগণের অনেকেই বড় বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া ও এর দ্বারা কিছু সম্পদ উপার্জন করা এবং প্রয়োজনে সেটা জমা করা যায়। সেই সম্পদকে যারা অসহায় আছে তাদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া, পরিবার পরিজনের খরচ মেটানো এবং নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করা যায়। এই সমস্ত কাজের জন্য ব্যবসা অত্যন্ত জরুরী এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

হাদিস শরীফে এসেছে মানুষের রিজিকের দশ ভাগের নয় ভাগ ব্যবসার মধ্যে নিহিত। স্বয়ং মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি দীর্ঘ বারো বছর ব্যবসা করেছেন। প্রথমত : তিনি শরিকানা ও মুদারাবা ব্যবসা করেছেন। হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার পুঁজি এবং উনার  শ্রম। নিজের পুঁজি দিয়েও তিনি ব্যবসা করেছেন। স্বয়ং  রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ব্যবসা করেছেন এটাই যথেষ্ট ব্যবসার গুরুত্ব বুঝার জন্য। নবী  নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন, ব্যবসায়ীদেরকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন,  সেই সাথে ব্যবসার বিভিন্ন ফযিলত বয়ান করেছেন এবং  সাহাবীদেরকেও তিনি ব্যবসা শিখিয়েছেন।  হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা এছাড়াও অনেক সাহাবায়ে কেরাম  ব্যবসা করতেন ।

আল্লাহ পাক কালামে পাকের মধ্যে বলেছেন, তিনি ব্যবসা, বেচাকেনাকে হালাল করেছেন। এটি মানুষের রিজিক সন্ধানের জন্যই করা দরকার।  কুরআনুল কারিমের আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, যখন সালাত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ তালাশ কর।  এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে রিজিকের কথা বলা হয়েছে। সেই রিজিকের নয় ভাগ নিহিত রয়েছে ব্যবসার মধ্যে। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকের মধ্যে বলেছেন, হালাল রিজিক অনুসন্ধান করা একটা ফরজ কাজ। অন্যান্য ফরজ কাজের পরে, নামাজ, রোজা ইত্যাদি যেমন ফরজ কাজ, তেমন হালাল রিজিক অনুসন্ধান করাও একটি ফরজ কাজ। আর হালাল রিজিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করা এটা অনেক সহজ। এটার দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ব্যবসার ফজিলত অনেক রয়েছে। ব্যবসার কথা কালামে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও করেছেন,  সাহাবায়ে কেরামও করেছেন। তিনি ব্যবসার নীতিমালার শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলাম যেহেতু সার্বজনীন এবং সবকিছুর সমাধান এতে রয়েছে। সে হিসেবে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য করার দিকটাও ইসলাম রেখেছে, যাতে করে মানুষ ইসলামিক বিধান মেনে ব্যবসা করতে পারে।

ব্যবসার মধ্যে ছল চাতুরী :

ব্যবসার মধ্যে বিভিন্ন ছল চাতুরী, বিভিন্ন প্রতারণা, ধোঁকা ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু ইসলামি শরীয়ত এসে এই সমস্ত কিছুকে দূর করে দিয়ে সঠিক অর্থে ব্যবসা করার শিক্ষা দিয়েছে। এমন অনেক ব্যবসা আছে, যার মাধ্যমে মানুষ ঠকে যায়, ঠকানো হয় এবং প্রতারণা করা হয়। এর মারাত্মক ক্ষতির দিকগুলো কুরআন হাদিসে বয়ান করা হয়েছে।

ওজনে কম দেওয়া :

ওজনে কম দেওয়া বা মাপে কম দেওয়ার কথা কুরআনে স্পষ্ট বয়ান করা হয়েছে।ওজনে কম দেওয়া এটা বড় মারাত্মক অপরাধ। জাহিলী যুগের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই প্রথাটা ছিল। তারা নিজেরা যখন মেপে নিত তখন ভাল করে মেপে নিত কিন্তু অন্যকে মেপে দেওয়ার সময় কম দিত। আল্লাহ পাক কুরআন আল কারীমের আয়াত নাযিল করে তাদের এই মন্দ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে বলে দিয়েছেন যে, এটি বড় ভয়ানক আজাবের কারণ। তাদের জন্য দুর্ভোগ এবং অয়েল নামের জাহান্নাম অপেক্ষা করছে।এখানে শরিয়ত-ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তুমি ওজনের মধ্যে কম দিতে পারবে না। যদি দাও তবে হালাল ব্যবসার সাথে সামান্য ওজনে কম দেওয়ার কারণে হারাম মিশ্রিত হয়ে গেল। সামান্য হারাম যদি মিশ্রিত হয়ে যায়, তবে সব মাটি হয়ে গেল।

ব্যবসার মধ্যে ধোঁকাবজি :

ইসলামী শরীয়ত এসে  নীতিমালা শিক্ষা দিয়েছে যে, ব্যবসার পদ্ধতি বা ধরণ কেমন হবে। ব্যবসার মধ্যে একটা দিক আছে যেটাকে গবনে ফাহিস বলা হয়। এর অর্থ হল অনেক বেশি ঠকানো। একটি দ্রব্য পাঁচ টাকা দিয়ে খরিদ করে সেটাকে যদি কেউ পাঁচহাজার টাকা দামে বিক্রয় করে। এই জাতীয় ব্যবসাও নিষিদ্ধ। এখন দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ মানুষ এমন ব্যবসা করছে যে, ব্যবসার মাধ্যমে সে ক্রেতাকে ব্যাপকভাবে ঠকাচ্ছে। আকাশ-পাতাল দাম নির্ধারণ করে ক্রেতাকে ধোঁকার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ফলে এটিও ইসলাম নিষেধ করেছে। ব্যবসা এইভাবে করা যাবে না।  এক হাদিসের মধ্যে আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  ব্যবসায়ীরা কেয়ামতের দিন পাপিষ্ঠদের সাথে পাপিষ্ঠ হিসেবে উঠবে। তবে ব্যবসায়ী যদি মুত্তাকী অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা হয়, সে যদি ব্যবসার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে, নেক্কার ও  সত্যবাদী হয়, তার জন্য রয়েছে পুরস্কার। অন্য হাদিসের মধ্যে তিনি বলেছেন, সত্যবাদী, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী  দুনিয়াতে তো লাভবান হবেই বরং কেয়ামতের ময়দানে সুপার হাইকোয়ালিটির জান্নাত লাভ করবে। এখানে তাঁরা  নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে তার অবস্থান হবে। এটি ব্যবসার কারণে হবে।

আমরা যারা ব্যবসা করব, তাদরেকে সততা, আমানতদায়িতা ও তাকওয়া রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অনেক ঘটনা ঘটছে। সাধারণত ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কসম ও শপথ করে।  যেমন- একটি পণ্য সে ক্রয় করল দশ টাকা দিয়ে কিন্তু বেশি মূল্যে বিক্রয় করার জন্য ক্রেতার কাছে বলে আল্লাহর কসম এই পণ্যটি বিশ টাকা দিয়ে খরিদ করেছি। এই একটা মিথ্যা কসম করল। আর এই মিথ্যা কসমের কারণে তারা পাপিষ্ঠ হিসেবে কেয়ামতের ময়দানে উঠবে।

অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা পুরাতন পণ্যের মধ্যে নতুন করে ডেট সংযুক্ত করে বাজারে বিক্রয় করে। এতে মানুষ ধোঁকাগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষ ভেজাল পণ্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইসলাম এটাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে। এই ধোঁকার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে-আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, যে ধোঁকাবাজি করে সে আমার দলভুক্ত নয়।

একবার আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার বাজারে গেলেন। এক ব্যবসায়ির শস্যজাতীয় পন্যের স্তুপ রাখা আছে। সেই পন্যের স্তুপের উপরে শুস্ক আছে। আল্লাহর রাসুল এর ভেতরে হাত প্রবেশ করালেন। তিনি দেখলেন যে ভেতরের শস্যগুলো ভেজা। তিনি বললেন কি ব্যাপার? এই ভেতরের পণ্যগুলো ভেজা কেন? তখন ব্যবসায়ী বললেন যে, বৃষ্টিতে শস্যগুলো ভিজে গিয়েছে। আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, তুমি ভেজাটা কেন উপরে রাখলে না, যাতে করে ক্রেতা ধোঁকাগ্রস্থ না হয়। এইভাবে ধোঁকা থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামে এই দিকটা রক্ষা করেছে।

অনেক সময় আমাদের দেশে যেটা হয় যে, ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসার মাল আমাদের দেশেই বা আমাদের ঘরেই তৈরি হয়। কিন্তু এটাকে অনেক সময় বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বা মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য বলা হয় যে এটা মেড ইন জাপান, মেড ইন আমেরিকা, মেড ইন ইন্ডিয়া ইত্যাদি। এটা করা হয় পণ্যটিকে আকর্ষণীয় করে বেশি দামে বিক্রয় করার জন্য। অথচ এটি নিজের ঘরেই তৈরি। এটা চরম ধোঁকাবাজি।  এই ব্যবসার উপার্জিত আয় সবটাই হারাম হয়ে গেল। এই ভাবে সমাজে ঠকানোর বিভিন্ন পন্থা আছে।

আমরা দেখি যে, মাছের বাজারে এমন লাইটিং করে রাখা হয় যে লাইটিংএর কারণে পচা মাছও চকচকে উজ্জ্বল দেখা যায়। মানুষ মনে করে কত তাজা মাছ! কাপড়ের দোকানে গেলে সেখানে এমন ভাবে লাইটিং করা হয় যাতে কাপড়ের রং চেঞ্জ হয়ে যায়। মানুষ মনে করে কত উজ্জ্বল রঙের কাপড়। অথচ পরে দেখা যায় কাপড়ের কালারটা সঠিক না। এক্ষেত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি অনেক বড় মুফতি ছিলেন। চার মাযহাবের চার ইমামের মধ্যে সর্ব প্রধান এবং শ্রেষ্ঠ ইমাম ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। তিনি দুপুরবেলা একদিন দোকান বন্ধ করে ফেলছেন। তাঁকে সাথীরা জিজ্ঞেস করলেন তিনি দোকান বন্ধ করছেন কেন? তখন তিনি বলেন, দেখনা আকাশে মেঘ জমেছে। তখন সাথীরা বলে আকাশে মেঘ জমার সাথে কাপড়ের দোকান বন্ধ করার সম্পর্ক কি? তিনি বললেন যে, মেঘ জমার কারণে পরিবেশটা এমন হয়ে গিয়েছে যে একটু ঘোলাটে পরিবেশ হয়ে গিয়েছে। কাপড়ের যেটা অরিজিনাল রং সেটা একটু চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।  মানুষ যেন কাপড়ের সঠিক রংটা না বুঝে নিয়ে যায় তবে ধোঁকা গ্রস্থ হবে। এজন্য আমি এখন বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছি।  যখন পরিস্কার আবহাওয়া হবে সবকিছু ভাল হয়ে যাবে অরজিনাল রং যখন ফুটে উঠবে তখন আমি বিক্রয় শুরু করব। যাতে মানুষ ধোকা গ্রস্থ না হয়।এটার নাম হল তাকওয়া। এটার নাম হল আল্লাহ ভীতি।  কোনভাবেই ব্যবসার মধ্যে হারামকে মিশ্রিত করা যাবে না। অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বা ঠকিয়ে ব্যবসা করা যায় না।

আমাদের ব্যবসার মধ্যে দেখা যায় অনেক দোকানে লিখে রাখি বিক্রিত পণ্য ফেরত নেওয়া হয় না। অথচ শরীয়ত-ইসলামে এর নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেটাকে খেয়ারে রুইয়ত বা খেয়ারে আইব বলা হয়। অর্থাৎ মাল কেনার পরে যদি এর  মধ্যে ত্রুটি প্রকাশিত হয় তো এই মাল ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতার পুরোপুরি আছে। কারণ সে এই মাল ত্রুটিসহ কিনেনি। তার দৃষ্টিতে ভাল ছিল। কিন্তু ঘরে নেওয়ার পরে দেখা গেল মালটা ত্রুটিপূর্ণ বা যেমন চেয়েছিল তেমন হয় নি।

এখন অনলাইনের অনেক ব্যবসা রয়েছে, যেখানে ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে দেখানো হয়। কিন্তু ছবিতে দেখার পরে এবং যখন বাস্তবে হাতে এসে পৌঁছায় তখন এক রকম হয় না। এটি একটু ডিফারেন্স হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বেচাকেনার জন্য আগেই থেকে চুক্তি করে নেওয়া দরকার যে ক্রেতার সিদ্ধান্তটা সরাসরি দেখার উপর নির্ভরশীল। অনলাইনে বা সরাসরি ব্যবসা হোক। এমন সিদ্ধান্ত যখন নিবে যে, আমি সরাসরি পণ্য দেখে পছন্দ করে ক্রয় করব। আর যদি পণ্য পছন্দ না হয়, তবে পণ্য কিনব না। এটাকে খেয়ারে রুইয়ত বলা হয় অর্থাৎ দেখার ব্যপারে যে ইচ্ছা এই বিষয়ে ইসলাম শরীয়তে রয়েছে।  কিছু মাল থাকে যেগুলো ত্রুটিপূর্ণ। সে পণ্যগুলো ব্যবসায়ীদের উচিত খোলে রাখা।  তুমি এই ত্রুটি সহ যদি নাও তবে এত টাকা দাম দিয়ে নিতে পার। এইভাবে তাকে ধোঁকা না দিয়ে বরং তার সামনে এটাকে স্পষ্ট করে দেওয়া। এভাবে বিক্রয় করলে মানুষ ধোঁকাগ্রস্থ হবে না। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এমন ছিল। ওনারা এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন পৃথিবীতে। ক্রেতা মাল খরিদ করেছে এরপর ফেরত দিতে এসেছে তাঁরা হাসিমুখে ফেরত নিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ অনেক দোকানদার ভাইরা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শকে ধারণ করে রেখেছেন। তবে এই সংখ্যাটা খুব কম । যারা প্রয়োজনে মাল ফেরত নেয় এবং বলে যে পণ্য ফেরত নেওয়া হবে সমস্যা নেই। মানুষ ক্রয় করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে। সেজন্য যদি কেউ  ব্যবসায় এই পদ্ধতি গ্রহন করে যে, দোষ ত্রুটি প্রকাশ হবার পরে ফেরত নিবেন।  সেখানে দেখা যায় যে, ঐ ব্যবসায়ীর ব্যবসা আলহামদুলিল্লাহ আরও বেড়ে যায়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত আসে তার উপর। কিন্তু যদি কেউ কোনো রকমে ক্রেতাকে দিতে পারলেই হল এমন আচরণ করে। আর ভাবি আমার দায়বদ্ধতা নেই। তাকে দিয়ে দিলাম আমি টাকা পেয়ে গিয়েছি। আর ফেরত নেওয়া সম্ভব না। এইবার ঐ মানুষটা বাধ্য হয়েই খারাপ মাল গ্রহন করল। আমি তার টাকা নিয়ে অনেক ধনী হচ্ছি। তাহলে আমি হারাম মাল গ্রহণ করছি।  এই বিষয়গুলো ইসলামে স্পষ্ট রয়েছে। সততা, আমানতদারিতা এই বিষয়গুলো রক্ষা করলে তার জন্য রয়েছে সুসংবাদ। যদি এর ব্যাতিক্রম হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। কেয়ামতের ময়দানে সেই ব্যবসায়ীরা পাপিষ্ঠ হিসেবে উঠবে।

ব্যবসার মধ্যে আরো কিছু ধোঁকাবজি :

আমাদের সমাজে কিছু ব্যবসা এমন আছে, যেমন শেয়ার ব্যবসা, জায়গা জমিনের ব্যবসা, ফ্ল্যাট বেচা কেনার ব্যবসা ইত্যাদি। যেই মানের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে দেওয়ার কথা ছিল, সেই মানের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে হস্তান্তর করল না বা সময়মত হস্তান্তর করল না। তার টাকা নিয়ে সে অন্যকাজে লাগিয়ে তাকে অপেক্ষা করাল। এগুলো সবই ধোঁকাবাজি, প্রতারণা। এ জাতীয় ব্যবসার দ্বারা সে ভাল ব্যবসায়ী হিসেবে আখ্যায়িত হবে না। বরং ধোঁকাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। সমাজেও সে নিগৃহীত ও খারাপ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহর দরবারেও বান্দার হক নষ্ট করার কারণে পাকড়াও হবে এবং আল্লাহ পাকের আজাব পাবে।

শেয়ার মার্কেটে বিভিন্ন ব্যবসা আছে। কিছু ব্যবসা আছে এর মধ্যে হালাল এবং কিছু ব্যবসা আছে হারাম। পুঁজি নাই, পণ্য নাই, শুধু কাগজ বেচাকেনা। কাগজের মাধ্যমে দেখাচ্ছে যে তার মূল্য আপডাউন করছে। এই মিনিটের মধ্যে বাড়ছে আবার সেকেন্ডের মধ্যে কমে যাচ্ছে। যদি এগুলো শুধু কাগজ কলমের উপর হয়, তাহলে শেয়ার মার্কেটের এই ব্যবসা কিছুতেই হালাল হতে পারে না। হালাল হতে হলে তার পণ্য থাকতে হবে যে, পণ্য বেচাকেনার উপর দাম কমা বাড়ার বিষয়টা আছে। এর অনেক পার্ট আছে, বিশ্লেষণ আছে। যারা শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করেন তারাও এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছে শেয়ার মার্কেটের ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এই শেয়ার মার্কেটের ব্যবসায় নামা উচিত। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে এলেম অর্জন করা প্রত্যেকটা মুসলমানদের জন্য ফরজ। আমি যে কাজ করতে যাচ্ছি বা ব্যবসা করতে যাচ্ছি তার এলেম অর্জন করতে হবে। কোন ব্যবসা হালাল এবং কোন ব্যবসা হারাম, কোন পণ্য বিক্রয় করা যাবে, কোন পণ্য বিক্রয় করা যাবে না, কোন পণ্য বিক্রয় করা মাকরু হবে, কোন পণ্য বিক্রয় করা হারাম হবে ইত্যাদি জানতে হবে। এমন কিছু পণ্য আছে যেগুলো বিক্রয় করা মুসলমানদের জন্য জায়েজই নেই।  মদ, শুকর ইত্যাদি বিক্রি করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই। খাওয়া তো দুরের কথা, এগুলো রাখা বা বিক্রি করা কোনটিই জায়েজ নেই। কিন্তু অনায়াশে মানুষ এই রকম নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে। এবং ক্রেতা অনায়া্শে ক্রয় করছে। এই নেশা জাতীয় দ্রব্য এর দ্বারা যে ব্যবসাটি করছে, অর্থ উপার্জন করছে,  এই উপার্জিত অর্থ কোনভাবেই হালাল নয়।এটি হারাম উপার্জন হচ্ছে। ব্যবসার এই সমস্ত দিকগুলো এটা অনেকে বুঝেই না। এটা আমরা পালন করি না। এটি পালন করলে তার জন্য অনেক সুসংবাদ রয়েছে। নবী রাসুলদের সাথে তার জান্নাত হবে।  পালন না করলে বড় ধরণের ক্ষতি অপেক্ষা করছে।

সুদী কারবারী ব্যবসা :

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক বলেছেন পাইকারি ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসা পাশাপাশি। সুদী কারবার এখন অনেক বেশি।  ব্যাংকিং যে ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে অধিকাংশ ব্যাংক দেখা যায় যে, সুদের কারবার করে। অথচ সুদ সম্পূর্ণ হারাম। বাহ্যত দেখা যায়, সুদ সম্পদ বাড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুদে সম্পদ কমিয়ে দিচ্ছে। আল্লাহপাক বলেছেন, রিবায় তোমার সম্পদকে কমিয়ে দিবে তুমি টের পাবে না। হয়তো বা মালের বিশাল স্তুপ হবে কিন্তু সেখানে বরকত থাকবে না। আবার হয়তো বা মালই কমে যাবে। তুমি দেখছ যে, একশ টাকা আমি ঋণ দিই তাহলে সেখানে একশ পাঁচ টাকা আসতেছে। মনে হয় পাঁচ টাকা বাড়ল। কিন্তু আল্লাহ পাক বলেছেন, সদকার দ্বারা মাল বাড়ে আর রিবার দ্বারা মাল কমে। এই মালের কোন বরকত থাকে না। এই মালের দ্বারা কেউ শান্তি পায় না।

সুদের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছে কিন্তু তার পরিবারে দেখেন শান্তি নেই। তার জীবনে শান্তি নেই। অশান্তি আর অশান্তি। কারণ ঐ সুদী মালের প্রভাব। আর সুদ একটা অমানবিক বিষয়। এটি এমনিতেই হারাম হয় নি! এর পেছনে অনেক বড় কারণ আছে। মানুষের রক্ত পানি করা টাকা সুদের কারবারিরা ফ্রি ফ্রি নিয়ে নিচ্ছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিচ্ছে। এখন বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের সমাজ এমন হয়ে গিয়েছে যে, গ্রামের সাধারণ মানুষ তার কাছে যদি পাঁচশত টাকা থাকে তাহলে এই টাকাটাও সেই ব্যক্তি সুদে লাগাচ্ছে। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে যদি, কোন ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন হয় তবে তাকে কর্জে হাসানা দাও। কর্জে হাসানা মানে হল তাকে সুদ মুক্ত ঋণ দাও, যাতে করে এই ঋণের মাধ্যমে তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে দান-সদকার চেয়েও কর্জে হাসানা অনেক বেশি সওয়াব রাখে। দান-সদকা তুমি তো নিজের মত করছ কিন্তু এই লোকটা যা চাচ্ছে সে তার প্রয়োজন থেকে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তুমি তার প্রয়োজন পূরণ করছ। আরও অনেক অনেক কারণ আছে।

আর ঋণ দিয়ে যদি তার থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়া হয় যে দশ টাকা দিলাম পনেরো টাকা নিব, কিংবা একহাজার টাকা দিলাম এগারশ বা বারশ টাকা নিব। তাহলে সেটি হারাম আয়। প্রত্যেকটা মানুষের পকেট যেন এক একটা ব্যাংক হয়ে গিয়েছ, এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ এটা একটা চরম অন্যায়। হাদিস শরিফে এসেছে আল্লাহ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নাম দেখেছেন। জাহান্নামে একটা লোককে দেখেছেন যে রক্তের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফেরেশতা তাকে বড় পাথর দিয়ে আঘাত করছে। আবার সে মাঝখানে চলে যাচ্ছে। আবার কিনারে আসতেছে কিন্তু আবার মাঝখানে চলে যাচ্ছে। এভাবে তার শাস্তি হচ্ছে।রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করলে সে কে? ফেরেশতারা বললেন, সে সুদ খোর।

সুদ যারা খায় তারা সরাসরি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই সম্পর্কিত অনেক আয়াত কুরআনুল কারিমে এসেছে। এটা একটা মারাত্মক ধরণের অন্যায় এবং বড় ধরণের একটা পাপ। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে উনার দাড়ি আছে, টুপি আছে, পাঞ্জাবি পায়জামা আছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তিনি হাজি সাহেব আরও অনেক কিছু। কিন্তু উনি সুদী কারবার করে। উনি সুদের সাথে জড়িত। তো দেখা গেল ইবাদত বন্দেগী সব শেষ। কিছুই তার কবুল হবে না। যদি হারাম খাদ্য দ্বারা তার শরীর গঠিত হয়, হারাম পোশাক তার শরীরে থাকে, হারাম তার পানীয় হয়। তবে তার ইবাদত বন্দেগী, নামাজ পড়া, হজ করা, রোজা রাখা কিছুই কবুল হবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সুদী কারবারটা সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে গিয়েছে। সুদী কারবার থেকে যারা প্রকৃত মুসলমান তারা অবশ্যই ফিরে আসার চেষ্টা করে এবং আল্লাহপাক তার অনেক বান্দাদের ফিরে আসার তৌফিক দান করুন।

ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাংক যে ঋণ দেয় সেক্ষেত্রেও দেখেন অনেকে বলে ইসলামি। কিন্তু ইসলামিক তখনই বুঝা যাবে যখন বাস্তবিকই তারা ইসলাম বা শরীয়ত সম্মতভাবে করে। এমনও আছে যে শরীয়া বোর্ডও আছে, বোর্ডের পরামর্শকও আছে। কিন্তু বাস্তবে ফিল্ডে কাজ করে না। এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। নিয়ম হল, যদি কাউকে ঋণ দেওয়া হয়, টাকার বিনিময়ে টাকা। দশ টাকা ঋণ দিলে বার টাকা ফেরত নিতে পারবে না তাকে দশ টাকাই ফেরত নিতে হবে। দুই টাকা অতিরিক্ত নিলে সেই টাকা সুদ হয়ে যাবে।

যদি এখানে এইটা করে যে, কারো বিল্ডিং বানানোর দরকার। সেখানে তাকে যদি বলে, বিল্ডিং বানাতে যে কয়েক হাজার ইট লাগবে, কত টন রড লাগবে, কতগুলো সিমেন্ট লাগবে, যার কাছে টাকা আছে সে ব্যাংক হোক বা ব্যক্তি মালিকানা যাই হোক না কেন, সে যদি বলে আমার কাছে পাঁচ কোটি টাকা আছে। আমি তোমাকে বিল্ডিং বানিয়ে দিব। অর্থাৎ তোমার বিল্ডিং বানাতে যা কিছু লাগবে তা আমি খরিদ করে তোমার কাছে বিক্রি করব। আমি যদি একটি ইট দশ টাকা দিয়ে কিনি তবে তোমার কাছে এগার টাকা দিয়ে বিক্রয় করব। তুমি আমাকে কিস্তিতে বা যেমনভাবে আমাকে অর্থ ফেরত দাও তোমার আমাকে এগার টাকা করেই দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক যদি তাকে লোন দেয়, তাহলে সেটি হালাল হবে। কিন্তু যদি মুখে মুখে বলে আর টাকা দিয়ে দেয়। এরপর যদি তারা অতিরিক্ত টাকা ফেরত নেয় তবে সেটা সুদ। এইজন্যই ব্যবসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  ইবাদত। এই ইবাদতের মাধ্যমে দুনিয়ার অনেক উন্নতি করা যায় এবং আখিরাতের উন্নতি অর্থাৎ জান্নাতে নবী-রাসুলদের সাথেও থাকা যায়। কিন্তু ব্যবসার এই শর্তগুলো পালন করা হয় না। ইসলামে যে ব্যবসার ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচা, মাপে কম দেওয়া থেকে বাঁচা, পঁচা জিনিসকে ভাল করে প্রচার না করা ইত্যাদি ইত্যাদি যে সমস্ত বিষয়গুলো আছে এই সব ধরণের ধোঁকামুক্ত থেকে যদি ব্যবসা করা যায়। নবী-রাসুলরা যেভাবে ব্যবসা করেছেন সেই ভাবে, তাহলে অনেক বড় সওয়াব।

আমরা যেভাবে ব্যবসা করতে পারি :

সকল ব্যবসায়ীরা ব্যবসার ক্ষেত্রে এই নিয়ত করতে পারে যে, আমি এইজন্য ব্যবসা করছি কারণ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসা করা একটা সুন্নত। রাসুলের সুন্নাহ পালন করার জন্য আমি ব্যবসা করছি। যদি এই নিয়ত করে তাহলে তার ব্যবসার সাথে সাথে সওয়াবও হবে। রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ীও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবসা করেন, তাহলে এই ব্যবসার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সে অনেক বড় লাভবান হবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম করলে সে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আল্লাহপাক আমাদের কে এই বিষয়গুলো বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমরা যারা মুসলিম এবং যারা ব্যবসা করছি, আমাদের সকলের ব্যবসায় ইসলামের বিধান মেনে চলা উচিত। কারণ এর মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

খতীব, লালমাটিয়া শাহী মসজিদ, লালমাটিয়া, ঢাকা

ভাইস প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া, ঢাকা